অন্যান্য দল যখন সম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা এখনও ঘোষণা করতে পারেনি, তখন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ৪২ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা দিল।রোববার (১০ মার্চ) ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা প্রার্থী তালিকায় ভারসাম্য রাখা হলো নবীন, প্রবীণ, মুসলিম সম্প্রদায় এবং নারী ব্রিগেডের ওপর।একইভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা রাখলেন তার দলের পুরোনো সংসদ সদস্যদের ওপর। তাদের নিয়ে তিনি হাঁটলেন ব্রিগেডের আধুনিক মানের মঞ্চে। তবে এবার একবারেই ভরসা রাখতে পারলেন না অভিনেত্রী মিমি এবং নুসরাতের ওপর।উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে প্রার্থী হয়েছেন জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া, আলিপুরদুয়ার প্রার্থী হয়েছেন প্রকাশ চিক বড়াইক, জলপাইগুড়ি থেকে প্রার্থী হয়েছেন নির্মল চন্দ্র রায়, দার্জিলিং থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন গোপাল লামা। উল্লেখ্য, এই আসনে বিজেপি প্রার্থী করতে চলেছে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে ফলে এই কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবে সবার।রায়গঞ্জ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী, বালুরঘাট থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিপ্লব মিত্র, মালদা উত্তর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন পুলিশ কর্তা প্রসুন ব্যানার্জি। তিনি গতকাল কর্মস্থল থেকে পদত্যাগ করেছেন।মালদা দক্ষিণ থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন অক্সফোর্ড শিক্ষার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হান, তিনি মালদাহর বাসিন্দা। জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী হলেন খলিলুর রহমান। জাতীয় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বহরমপুর আসন থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে যা এবারের জাতীয় নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের দেওয়া বড় চমক।
বহরমপুর থেকে টানা পাঁচবারের জয়ী সাংসদ তথা রাজ্যের জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এই আসনে অধীরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ইউসুফ পাঠান।মুর্শিদাবাদ থেকে প্রার্থী হয়েছেন আবু তাহের খান। কৃষ্ণনগর আসনে মমতা ভরসা রাখলেন মহুয়া মৈত্রর ওপর। তিনি গত নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। তবে তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকায় সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন লোকসভার স্পিকার।
রানাঘাট আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মুকুটমণি অধিকারী। তিনি গতবার বিজেপির টিকিটে বনগাঁ দক্ষিণের জয়ী বিধায়ক। দুদিন আগেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বনগাঁ থেকে লড়াই করবেন বিশ্বজিৎ দাস। ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী হলেন পার্থ ভৌমিক।
দমদম কেন্দ্র থেকে ফের একবার তৃণমূলের টিকিটের প্রার্থী হলেন অধ্যাপক সৌগত রায়। তিনি সেই অঞ্চলের জয়ী সংসদ। উত্তর২৪ পরগনার বারাসাত থেকে প্রার্থী হলেন ডক্টর কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
বসিরহাট থেকে প্রার্থী হয়েছেন হাজী নুরুল ইসলাম। গতবার এই কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। কিন্তু তার সম্পর্কে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, নুসরাত গত পাঁচ বছরে ৩ থেকে ৪ বার তার কেন্দ্রে এসেছিলেন। এছাড়া নুসরাতের কেন্দ্র সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা গোটা ভারতে শিহরণ ধরিয়েছে। কিন্তু তারপরেও নুসরাতের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। ফলে সব মিলিয়ে নুসরাত এবার টিকিট পেলেন না।
দক্ষিণ২৪ পরগনা জয়নগরের প্রার্থী হলেন প্রতিমা মন্ডল। ওই জেলার মথুরাপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূলের যুব নেতা, এলাকার ভূমিপুত্র বাপি হালদারকে।
ডায়মন্ড হারবার থেকে ফের একবার প্রার্থী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা যাদবপুর আসনের প্রার্থী করা হলো অভিনেত্রী শায়নী ঘোষকে। তিনি তৃণমূল রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। এই আসন থেকে গত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। সম্প্রতি তিনি দলকে জানিয়েছিলেন, এবারে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে চান না। যদিও স্থানীয়দের অভিমত, নুসরাতের মত মিমিকেও পাওয়া যায় না। আর সেই কেন্দ্র থেকেই মমতা বেছে নিল সায়নী ঘোষকে।
দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী হলেন মালা রায়। তিনি গতবারও এই আসন থেকে জয়ী সাংসদ।
উত্তর কলকাতা আসনেও তৃণমূল ভরসা রাখলো দলের প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর। সুদীপের ওপরেই সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজেপিতে গেছেন বিধায়ক তৃণমূল তাপস রায়। ধারণা করা হচ্ছে, সুদীপের বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে তাপস রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। ফলে এই কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবে সকলের।
হাওড়া জেলায় প্রার্থী করা হলো গতবারে জয়ী সংসদ সাবেক ভারতীয় ফুটবলার, প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। হাওড়া জেলার উলুবেরিয়া থেকে প্রার্থী সাজদা আহমেদ। শ্রীরামপুর থেকে প্রার্থী করা হলো ওই অঞ্চলের পুরনো সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
চমক থাকবে হুগলি কেন্দ্রের দিকেও। এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হলো দিদি নাম্বার ওয়ান খ্যাত অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জিকে। ইতিমধ্যে বিজেপি সেই কেন্দ্রের গতবারের জয়ী সাংসদ অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ওপর এবারও ভরসা রেখেছেন। ফলে লকেট-রচনার লড়াই হতে চলেছে। আরামবাগ আসনের প্রার্থী মিতালী বাগ।
নজর থাকবে তমলুক আসনের দিকে। এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে অত্যন্ত নবীন তথা তৃণমূলের সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবাংশু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর। উল্লেখ্য বিষয় হলো, এই আসন থেকে প্রার্থী হতে চলেছে কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত ৭ মার্চ তিনি বিচারপতির আসন ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে এই আসনে নবীণ ভার্সেস প্রবীণের লড়াই হতে চলেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে ওই অঞ্চলের বাসিন্দা উত্তম বারিককে।
ঘাটাল আসনের ওপর তৃণমূল ভরসা রাখলো অভিনেতা দীপক অধিকারী অর্থাৎ দেবের ওপর। যদিও সম্প্রতি তৃণমূল নেত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি এবারের নির্বাচনের প্রার্থী হতে চান না। কিন্তু মমতা এবং অভিষেকের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হয় দেবকে। আর ঘাটাল কেন্দ্র থেকে সেই দেবের ওপর ভরসা রাখলো তৃণমূল।
রাজ্যের ঝাড়গ্রাম জেলার প্রার্থী করা হয়েছে কালিপদ সোরেনকে। তিনি পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্ত। একইসঙ্গে মমতার সরকারের বঙ্গবিভূষণ উপাধি পেয়েছেন তিনি।
মেদিনীপুর আসনে তৃণমূল ভরসা রাখলো অভিনেত্রী জুন মালিয়ার ওপর। পুরুলিয়া থেকে প্রার্থী হয়েছেন শান্তিরাম মাহাতো।
বাঁকুড়া থেকে প্রার্থী হয়েছেন অরূপ চক্রবর্তী। তিনি ওই অঞ্চলের বর্তমান বিধায়ক। গত নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল ভরসা রেখেছিল অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জির ওপর। কিন্তু তিনি বিজেপির কাছে পরাস্ত হন।
বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী হলেন চিকিৎসক শর্মিলা সরকার। তিনি বর্তমানে কলকাতা মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন কীর্তি আজাদ।
আসানসোল কেন্দ্র থেকে তৃণমূল ভরসা রাখল বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহার ওপর। তিনি ওই অঞ্চলের জয়ী সাংসদ। যদিও অভিনেতা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তার বয়স হয়েছে তিনি আর প্রার্থী হতে চান না। তার বদলে মেয়ে সোনাক্ষীকে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু এদিন দেখা গেল তৃণমূল, অভিনেতার মতামতে সবুজ সংকেত দেয়নি।
বোলপুর আসনের প্রার্থী অসিত কুমার মাল। বীরভূম আসনেও তৃণমূল ভরসা রাখল গতবারের জয়ী সাংসদ তথা অভিনেত্রী শতাব্দী রাযয়ের ওপর। এছাড়া বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন বিধায়ক সুজাতা খাঁ। উল্লেখ্য, তার স্বামী বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।