ঢাকা, মঙ্গলবার ৩ই ডিসেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে সংসদে বিল

ষ্টাফ রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-02-29, 12.00 AM
দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে সংসদে বিল

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে বিল তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত ‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে তুললে তা পরীক্ষা করে দুদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।এর আগে বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি যখন আইনটি করে তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবং সব দলের পক্ষ থেকে এ আইনের সমালোচনা করা হয়েছিল। দ্রুত বিচার আইন নামেমাত্র, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হয় খুব কম। সিআরপিসি মামলা যেভাবে চলে সেভাবেই চলে। শুধু গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইনটি মনে করা হয়। এ আইন দিয়ে সরকারের যদি ইনটেনশন থাকে তাহলে সাধারণ মানুষ বা প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করার সুযোগ রয়েছে। আপনি আজকে ক্ষমতায় আছেন, কালকে যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে তখন এই আইনের মাধ্যমে আপনারাই হয়রানি হবেন।তিনি বলেন, আইনটি স্থায়ী করবেন না, প্রত্যাহার করেন। প্রয়োজনে দু-এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ান। আপনারা ভুগবেন, মানুষ ভুগবে।

 

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের ওপর অত্যাচার করার জন্য আইন বলছেন! যখন এটা করা হয়েছিল আমরা বিরোধিতা করেছিলাম। আমি বলতে চাই, যখন এ আইন ২০০২ সালে পাস করা হয় তখন এর উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ এবং অন্য বিরোধী দলগুলোকে অত্যাচার করা। কিন্তু আপনি (চুন্নু) যদি দেখেন গত ১৫ বছরে এ আইনের প্রয়োগ যেভাবে হয়েছে সেখানে কিন্তু আপনার বক্তব্য সঠিক নয়। দ্বিতীয় কথা, এ আইন দেশের আইনশঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজন। এ আইন থাকার কারণে অনেক রকম বিশৃঙ্খলা গত ১৫ বছরে হয়নি।

 

তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দ্রুত বিচার আইন শুধু রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মী বা নেতাদের জন্য এ আইন ব্যবহার করা হয়নি। অনেক রকম সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা এ আইন প্রতিহত করেছে। এ কারণে আইনটি স্থায়ী করা উচিত।২০০২ সালে প্রথম এ আইনটি করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এ আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এ আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আজ এ সংক্রান্ত বিল সংসদে তোলা হলো।

 

বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়নি। অর্থাৎ আইনটির বিদ্যমান ধারা এখনকার মতই থাকবে।বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাকালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়-বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে জোরপূর্বক বাধা প্রদান- যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল।সেখানে তিনি আরও বলেন, আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিল দুই বছর। পরবর্তীকালে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ক্রমান্বয়ে সাত বার মেয়াদ বাড়িয়ে সবশেষ ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ১৭ বছর থেকে ২২ বছর বাড়ানো হয়, যার মেয়াদ আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হবে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এ আইনটি মেয়াদ শেষে বারবার তা না বাড়িয়ে স্থায়ীভাবে আইনে পরিণত করা প্রয়োজন।