পর্তুগালের লিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে মহান ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে।বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে দিবসের সূচনা করা হয়। পর্তুগালের লিসবনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রেজিনা আহমেদ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে লিসবনে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সভাপতির জহিরুল আলম জসিম এবং যুবলীগ নেতা তানভীর আলম জনি ও মাইনুল ইসলাম রাজন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গ । পরে, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আলোচনার আয়োজন করা হয় ৷ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। পর্তুগালের লিসবনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রেজিনা আহমেদ বলেন বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি একদিকে চরম শোক ও বেদনার, অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। এ জাতির জন্য সবচেয়ে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার হচ্ছে নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার, যা ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন। আলোচকরা তাদের আলোচনায় মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে ভাষা শহীদদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মাতৃভাষার মর্যাদা ও সম্মানকে সমুন্নত রাখতে প্রবাসীদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান ৷
ভাষার ব্যবহার বিশেষত স্বাগতিক দেশের জনগণের ভাষার দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রবাসে আমাদের জীবনমান উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বলে তারা মত প্রকাশ করেন। ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি কথ্য রূপকে সংরক্ষণের ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন, যা ভাষার বৈচিত্র্যকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষার অধিকার, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে আমরা চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করি। যার পুরোধা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা ও নেতৃত্বে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ-সংস্থা ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে সমগ্র বিশ্বে এখন দিবসটি প্রতিপালিত হচ্ছে। একুশের চেতনা বিশ্ব দরবারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বে বিদ্যমান আট সহশ্রাধিক ভাষার মধ্যে মাত্র ৬৫টি ভাষা ছাড়া অন্যসব ভাষার অস্তিত্ব হুমকির সন্মুখীন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ আরো বেশী প্রাসঙ্গিক। মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রবাসী প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে দূতাবাসে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ , প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকরা এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত ছিলেন।