অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসায় রওনা দেন ঢাকার আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শামসুল আলম (৪৫)। অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
আর তখনই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান তিনি।ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। একই পরিবহনের দু’টি বাস পাল্লা দিতে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে সড়কে পিষে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় শারমিন গার্মেন্টসের সামনে আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহনের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন শামসুল আলম নামে ওই ব্যক্তি। তবে ঘটনার পর থেকেই ঘাতক বাসচালক ও বাসের সহকারী পলাতক রয়েছেন।
ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের একটি সিসিটিভি ফুটেজে লোমহর্ষক এ ঘটনাটি স্পষ্ট ধরা পড়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৭টা ১২ মিনিটে আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাস রাস্তায় থামিয়ে যাত্রী তুলছিল। এমন সময় পেছন থেকে একই পরিবহনের আরও একটি বাস চলে এলে সামনের বাসটি তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেয়। পেছনের বাসটি দ্রুত গতিতে সামনের বাসটির আগে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনই রাস্তার পাশে দাঁড়ানো শামসুল আলমকে চাপা দেয় পেছনের বাসটি। প্রথমে বাসের ধাক্কায় সরাসরি বাসের সামনের চাকার নিচে চলে যান ওই ব্যক্তি। তারপরও বাসটি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে সামনের বাসটিকে ওভারটেকের চেষ্টা করেন চালক। তখন পেছনের চাকায় আবার ওই ব্যক্তিকে পিষে ফেলা হয়।
জানা গেছে, আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহনের ওই ঘাতক বাসটির নম্বর ঢাকা মেট্রো- ব-১৩-০১৮০।
শুক্রবার (১২ মার্চ) প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, রাস্তা পারাপারের জন্য ওই ব্যক্তি পাশেই দাড়িয়েছিলেন। কিন্তু আশুলিয়া ক্ল্যাসিক পরিবহনের দু’টি বাস পাল্লা দিতে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে পিষে ফেলেন চালক।
ঘটনার পর থেকেই ঘাতক বাসটির চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেফতার করা গেলে বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, আশুলিয়া ক্ল্যাসিক পরিবনের বাসগুলো বর্তমানে ওই সড়কে আতঙ্কের নাম। দ্রুতগতি ও অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে বাসগুলো।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে শামসুল আলম নিহত হওয়ার পর তিনটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন শ্রমিকেরা। এছাড়া ভাঙচুর করা হয় অন্তত আরও ১০টি বাস।
ঘটনার পর পর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছুটির শামসুল আলম কারখানার সামনে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকার দিক থেকে আসা একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে শ্রমিকেরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শামসুল আলমের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উত্তেজিত শ্রমিকেরা বাসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।