জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা রক্ষা এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের হয়রানি রোধে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছে অংশগ্রহণে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত সহ ১০টি শর্ত দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস)।শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব শর্ত তুলে ধরেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথমবারের মতো ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে আয়োজিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের পরিবর্তে আরও বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী বছর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও উপাচার্যের অনুরোধ এবং গুচ্ছের সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে মর্মে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে জবি শিক্ষক সমিতি ১০ দফা দাবি জানিয়ে দ্বিতীয়বারের মত গুচ্ছে যেতে রাজি হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়কে সম্মান জানিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার শর্তে জবিশিস ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশগ্রহণে কিছু শর্তসাপেক্ষে মতামত প্রদান করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি না কমে চরম আকার ধারণ করে।
আরও বলা হয়, বহুবার অপেক্ষমান তালিকা দিয়েও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা পূরণ সম্ভব হয়নি। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার গুণগত মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে জবির শিক্ষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জবি শিক্ষক সমিতির তুলে ধরা শর্তগুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রপতির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এনটিএ (ঘঞঅ) গঠনের মাধ্যমে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা; ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির সকল প্রক্রিয়া শেষ করে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবছরের পহেলা জুলাই ক্লাশ শুরু করা; পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত স্কোর ও মেধাক্রম প্রকাশ করা এবং দীর্ঘসূত্রিতা রোধে মাইগ্রেশনের জটিলতা নিরসন।
আর্থিক স্বচ্ছতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোষাধ্যক্ষদের সমন্বয়ে শক্তিশালী নিরীক্ষা টিম গঠন ও ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আয়-ব্যায়ের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা। পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতোপূর্বে পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়া; সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আলাদা গুচ্ছ; শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা অনুযায়ী ভর্তি পূরণ;ভর্তির আবেদন ফি কমানো।
ভর্তি আবেদন ফি ছাড়া শিক্ষার্থীরা অন্য কোন কারণে অর্থ প্রদান করবেনা তা নিশ্চিত করা;বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আবেদনের সংখ্যা অনুযায়ী অর্থ প্রদান করা এবং পরীক্ষা পরিচালনার বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি সুস্পষ্ট আর্থিক নীতিমালা প্রণয়নের শর্ত দেওয়া হয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, গুচ্ছের ভর্তি শেষ করে ক্লাস শুরু করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়ে যায়। গুচ্ছের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিকে দাবিয়ে রাখতে জোর করে গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে।
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের বাধ্য হয়ে গুচ্ছে যেতে হচ্ছে। গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার ছোট স্কোপ পেলেও আমরা যেতে চাই না। শিক্ষক সমিতির দশটি শর্ত কার্যকর নাহলে শিক্ষকরা গুচ্ছে যেতে চায় না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর গুচ্ছ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।