ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সমালোচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির ভাষা আর টিআইবির ভাষা মিলে গেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। হাছান মাহমুদ বলেন, টিআইবি সবসময় বলে গবেষণালব্ধ রিপোর্ট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে টিআইবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো গবেষণা না করেই কিছু শ্যালো বিষয়, কিছু পত্রিকার রিপোর্ট আর তড়িঘড়ি করে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রেস ব্রিফিং করে। গতকালেরটি আমার কাছে সেরকমই মনে হয়েছে।তিনি বলেন, দেশে প্রকৃতপক্ষে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পর্যবেক্ষক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা পর্যবেক্ষক, ওআইসি, সার্ক ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশ থেকে যারা এসেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পর সবাই প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। পৃথিবীর শক্তিধর দেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
হাছান মাহমুদ বলেন, টিআইবির রিপোর্ট আসলে কারও পক্ষের হয়ে দেওয়া কি না, সে প্রশ্ন অনেকে রেখেছেন। কারণ বিএনপির ভাষা আর টিআইবির ভাষা মিলে গেছে। রিজভী (রুহুল কবির রিজভী) প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে যে কথাগুলো বলেন সেগুলোকে একটু পরিশীলিতভাবে টিআইবি পরিবেশন করেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।তিনি বলেন, বিএনপিসহ যারা নির্বাচন বর্জন করেছে, প্রতিহত করতে চেয়েছে, প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখনও প্রয়াস চালাচ্ছেন তাদের মুখে অস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্য এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে বলে অনেকে বলছে। যেভাবে নির্বাচন কমিশন কঠোরভাবে ও সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে, সেটির বিন্দুমাত্র প্রশংসা টিআইবির রিপোর্টে নেই।
টিআইবির সমালোচনা করলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে, সেটিকে ম্লান করতে টিআইবি রিপোর্টটি দিয়েছে। টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠান দরকার আছে। সিভিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠানগুলো যারা সরকারের ভুলত্রুটি উপস্থাপন করে, সরকারের সমালোচনা করে, আমরা সেগুলোকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করি। কিন্তু যখন রিপোর্ট কারও পক্ষে বা উদ্দেশ্যপ্রোণোদিত হয় তখন সেটি রাষ্ট্র, সমাজ ও সরকার কারো উপকারে আসে না। সেটি বিশেষ কোন গোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে দাঁড়ায়।টিআইবি যেন বিশেষ কোন গোষ্ঠী কিংবা নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির কিংবা গণতন্ত্রবিরোধী কোন শক্তির মুখপাত্র না হয় তেমনটা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
টিআইবিকে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ করা হবে কি না, জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করব, টিআইবি নিজেরা নিজেদের সংগঠনের যে মর্যাদা, সংগঠন সম্পর্কে যে ধারণা মানুষ আগে পোষণ করত, সেখান থেকে সরে এসে কারো মুখপাত্র যেন না হয়। নির্বাচনবিরোধী অপশক্তি কিংবা গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির সহায়ক শক্তি হিসেবে তারা যেন কাজ না করে, সেটি আমাদের কামনা।বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি বলেছে, নির্বাচন একপক্ষীয় ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।