মেহেরপুরে গত কয়েকদিন আকাশ থেকে নামছে ঘন কুয়াশা আর চারিদিকে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে মেহেরপুরে জেঁকে বসেছে শীত। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টাই আকাশ থাকে মেঘাচ্ছন্ন। একই সঙ্গে নামছে তুষারের মতো কুয়াশা। সন্ধ্যা থেকে পরদিন আধাবেলা পর্যন্ত থাকছে প্রচন্ড শীতের দাপট। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ঝড়ছে টিপ টিপ করে। যেন মনে হয় ঝরছে বৃষ্টি। কুয়াশার কারণে দিনের অর্ধবেলা পর্যন্ত যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। হাড় কাঁপানো শীতে শুধু জনজীবন নয়, নিস্তব্দ হয়ে পড়েছে প্রাণীকুলও। ঠা-ায় বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। হিমেল হাওয়া আর শীতে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষ। ছিন্নমূল মানুষের মাঝে নেমে এসেছে হাহাকার। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছে তারা। ফলে কুয়াশা-কনকনে শীতে কাহিল মেহেরপুরের মানুষ।
এদিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন সংগঠন কমবেশি শীত বস্ত্র বিতরণ করলেও পর্যাপ্ত নয়। এরইমধ্যে শৈত্য প্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় মেহেরপুরের তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলায় জেঁকেবসা শীতের পাশাপাশি কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা তেমন একটি মেলেনি কয়েকদিন যাবৎ। ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দূরপাল্লার বাস ট্রাকসহ ছোট ছোট যানবাহনগুলো হেডলাইট জালিয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় হলেও রাতে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। গত কয়েক দিনের জেঁকে বসা শীত ও শৈত্য প্রবাহের কারণে ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ থেকে শিশুরা। তাদের কারো কারো চিকিৎসকের দারস্থও হতে হচ্ছে।
সদর উপজলোর চকশ্যামনগর গ্রামের সবজি ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিক জহিরুল ইসলাম বলেন কয়েকদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। প্রচন্ড শীতে কাজ করা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে গেছে। আর কাজ না করলে খাওয়া জুটবে না। তাই বাধ্য হয়ে জমিতে কাজ করছি। শহরের অটো রিক্সা চালক তাহাজুল ইসলাম এবং মেহেদী বলেন, উত্তরের হীমেল হাওয়ায় অটো রিক্সা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। তবুও পেটের তাগিদে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। শীতের কারণে যাত্রীর তেমন একটা দেখা মিলছে না।
হোটেল বাজারে ফুটপাতের কাপড় ব্যাবসায়ী তৌফিক এবং রফিকুল ইসলাম বলেন, এবছর শীত তেমন একটা অনুভূত না হওয়ায় গরম কাপড়ের ব্যাবসা হচ্ছিল না। হঠাৎ কয়েকদিন যাবৎ তীব্র শীত পড়ায় এখন খরিদ্দারের চাপ, মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা তাদের সাধ্যের মধ্যে থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
চা বিক্রেতা মিজানুর রহমান জানান আবহাওয়া খারাপ সারাদিন রৌদ্র নাই সাধারণ মানুষ একটু বেশী চা খাচ্ছে এ জন্য বিক্রি ভালই হচ্ছে সারাদিন দোকান খুলে বসে আছি।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম, হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে যেসব শীত বস্ত্র এসেছে সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও শীত বস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে না হলেও স্থানীয়রা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরিব অসহায় মানুষদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করছে। ছিন্নমূল অসহায় মানুষেরা ফুটপাতে খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে নিবারণ করছে শীত।