রাত পোহালেই ভোট। চলছে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ভোট ঠেকাতে হরতাল ডেকেছে বিএনপি-জামায়াত। বাস-ট্রেনে আগুনে ঘটেছে মানুষের প্রাণহানি। সব মিলিয়ে জনমনে আতঙ্ক। এর প্রভাব দেখা গেছে ঢাকার রাস্তায়। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি নেই বললেই চলে। গণপরিবহনও কম। দোকানপাট বন্ধ। ফুটপাতে কিছু বিক্রেতাকে দেখা গেলেও নেই ক্রেতা। জরুরি প্রয়োজনে বিকেলে যারা বেরিয়েছেন, তাদের মধ্যেও ঘরে ফেরার তাড়া।শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রায় সব রাস্তাই ফাঁকা। কুড়িল থেকে রামপুরা কাঁচাবাজার পর্যন্ত সড়কে চিরচেনা যানজট নেই। গুলশান-১ চত্বর ও বিজয় সরণিতে নেই ট্রাফিকের লাল সিগন্যাল। নিষেধাজ্ঞার কারণে সড়কে মোটরসাইকেল কম। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা থাকলেও যাত্রীর অভাব।রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাড়ির সংখ্যা খুব কম। যানজট বলে কিছুই নেই। যাত্রীর সংখ্যাও অনেক কম। রুটভিত্তিক বাসের দেখা মিলছে কিছু সময় পর পর। যাত্রী কম থাকায় তাতে উঠতেও নেই তাড়াহুড়ো। কিছু সড়কে যেন বিকেলেই নেমেছে রাতের সুনসান নীরবতা।এদিকে, নিউমার্কেট এলাকায় দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। যান চলাচলও কম। ফলে সড়কে যানজটের বালাই নেই। নিউমার্কেটে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। অনুমতি না থাকা মোটরসাইকেল থামিয়ে মামলা দিতে দেখা গেছে।মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর এলাকা থেকে যাতায়াতের সব রাস্তায় গাড়ি কম। মহাখালী, শ্যামলী, টেকনিক্যাল, গাবতলী এলাকার চিত্রও প্রায় একই রকম। দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে না। রাস্তার দুপাশের দোকানপাটও অধিকাংশই বন্ধ।মিরপুর-কালশি-কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত চলাচল করে অছিম পরিবহন। অছিম পরিবহনের চালক মোতাহার হোসেন বলেন, ভয়-ডর বাদ দিয়ে রাস্তায় আছি। আমাদের সব বাসই রোডে আছে। কিছু বাস নিয়েছে পুলিশে। ভোটের সেন্টারে যারা কাজ করছে, তাদের আনা-নেওয়ার কাজ করছে সেগুলো। বাকি সব বাস রাস্তায় চলছে। তবে যাত্রী নেই।সাভার থেকে গুলশান-১-এ আসা বৈশাখী পরিবহনের চালক গোলাম রব্বানি বলেন, রাস্তা এখন পুরাই ফাঁকা। আসার পথে যাত্রীও নেই। এদিক থেকে ওদিকে (গুলশান থেকে আগারগাঁও-শ্যামলী) যাওয়ার জন্য কিছু যাত্রী দেখে এলাম। আমরা এখন বাস গাবতলী নিয়ে রাখব। আর চালাবো না আজ।ভোটের আগের দিন জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষের মধ্যে দ্রুত ঘরে ফেরার তাগিদ দেখা গেছে। অসুস্থ স্ত্রীকে থেরাপি দিতে মধ্যবাড্ডার ইবনে সিনা হাসপাতালে এসেছেন লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, সপ্তাহে দুবার থেরাপি দেওয়া লাগে। নিয়ম করে শনি ও মঙ্গলবার আসি। সেজন্য আজও আসছিলাম। রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। এখন দ্রুত বাসায় ফিরছি।পল্টন এলাকায় চাকরি করেন আতাউর রহমান, থাকেন খিলক্ষেত এলাকায়। অন্যদিন অফিসে কাজ শেষ করে বের হতে রাত ৭টা বেজে যায়। তবে আজ দ্রুতই অফিস থেকে ছুটি মিলেছে।আতাউর বলেন, বস বললো সবাই আজ ৩টায় চলে যাবেন। রাস্তার পরিস্থিতি ভালো না। কাল ট্রেনে আগুনে যেভাবে মানুষজন পুড়ে মরলো... দেখার মতো না। এজন্য সন্ধ্যার আগেই যাতে সবাই বাসায় ফিরতে পারি, সেজন্য ছুটি দিয়েছে অফিস।
গুদারাঘাট এলাকার ফুটপাতে কম্বলসহ শীতের কাপড় বিক্রি করেন রেজাউল। তিনি বলেন, আমাদের আবার ভোট। পেট না চললে ভোটের আলাপ করে লাভ নেই। ভোট হলেও শীত-তো আছে। মানুষ শীতের কাপড়, কম্বল কিনতে আসছে। এজন্যই আজকেও বসছি। তবে বেচাকেনা খুব কম।এদিকে সড়কে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেখা গেছে। ভোটের আগের দিন ঢাকার সব সড়কেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। হুইসেল বাজিয়ে প্রায় সব সড়কে মাঝেমধ্যেই পুলিশ, র্যাব, বিজিবির টহল গাড়ি ছুটছে।