সেই মহাকাব্যের পুনরাবৃত্তি হলো না। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার বিদায় ঘটে গেল শেষ ষোলো থেকেই। ১৪ বছরের মধ্যে এই প্রথম আসরটির কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলো বার্সা। আর লিওনেল মেসিদের বিদায় করে শেষ আটে জায়গা করে নিল পিএসজি। বার্সার শেষ আটের টিকিট পেতে জাল অক্ষত রেখে করতে হতো চার গোল! ম্যাচপূর্ব এমন অসম্ভব সমীকরণটা আরো কঠিন হয়ে পড়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের সফল স্পট কিকে। সুযোগ নষ্টের ভিড়ে অসাধারণ এক গোল করেন লিওনেল মেসি, তবে তা শুধু ব্যবধানই কমায়। বার্সেলোনাকে রুখে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে যায় মাউরিসিও পচেত্তিনোর শিষ্যরা।
বুধবার (১০ মার্চ) রাতে প্যারিসে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। প্রথম লেগে ৪-১ গোলে জয়ী পিএসজি দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ ব্যবধানে এগিয়ে পা রাখল পরের রাউন্ডে।
ব্যবধান অনেক বড় হলেও ম্যাচে যতগুলো সুযোগ পেয়েছিল মেসি-দেম্বেলেরা তার অর্ধেকও যদি কাজে লাগাতে পারতো লড়াইটা হতো জমজমাট। কিন্তু দেম্বেলের পাশাপাশি সুযোগ নষ্টের মিছিলে যোগ দেন মেসিও।
প্রত্যাবর্তনের নতুন মহাকাব্য লিখতে যতটা গোছালো ও আক্রমণাত্মক হওয়ার প্রয়োজন ছিল, শুরু থেকে ততটা পারেনি লা লিগার দলটি। তবে অধিকাংশ সময় বল দখলে নিয়ে চাপ ঠিকই ধরে রাখে তারা। এর ধারাবাহিকতায় অষ্টাদশ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ সুযোগ পায় দলটি। বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ডেম্বেলের নেওয়া কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে ফেরান কেইলর নাভাস। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই গোলরক্ষকের নৈপুণ্যে ২৩তম মিনিটে আবারও বেঁচে যায় পিএসজি; লেইভিন কুরজাওয়াকে ফাঁকি দিয়ে ডান দিক থেকে সের্জিনো দেস্তের নেওয়া শটে বল নাভাসের হাতে লেগে ক্রসবারে বাধা পায়। পরের মিনিটে ডেম্বেলের বাড়ানো ক্রসে মেসি পা লাগাতে ব্যর্থ হলে হতাশা বাড়ে বার্সেলোনার।
২৮তম মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে গোল পেয়ে যায় পিএসজি; বাঁ দিক থেকে ক্রস বাড়ান কুরজাওয়া, বল সরাসরি গোলররক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনের হাতে। কিন্তু এর ফাঁকে ডি-বক্সে ক্লেমোঁ লংলের বাধায় পড়ে যান মাউরো ইকার্দি। ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন প্রথম লেগে হ্যটিট্রিক করা এমবাপ্পে।
দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৫-১, সব আশা শেষ বার্সেলোনার? অনেকের মনে যখন এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তখনই মেসির দুর্দান্ত গোল। ৩৭তম মিনিটে পেদ্রির ছোট পাসে ফাঁকা জায়গা পেয়ে আচমকা শট নেন বার্সেলোনা অধিনায়ক। বুলেট গতিতে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।
বিরতির আগে ব্যবধান আরো কমানোর সুযোগ পান মেসি। কিন্তু তার দুর্বল স্পট কিক রুখে দেন নাভাস। বল তার পায়ে লেগে লাগে ক্রসবারে। ডি-বক্সে অঁতোয়ান গ্রিজমান ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পেয়েছিল সফরকারীরা।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ঢিমেতালে শুরুর মাঝে ৬১তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি মেসি। সতীর্থের পাস ছয় গজ বক্সের মুখে ফাঁকায় পেয়ে শট নিতে একটু দেরি করে ফেলেন তিনি, পরে বিলম্বিত শটটি ছুটে এসে ব্লক করেন মার্কিনিয়োস। আট মিনিট পর সের্হিও বুসকেতসের হেড দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন নাভাস।
শেষ দিকের খেলা আরো ঝিমিয়ে পড়ে। কোন দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই দেখা যায়নি গোল করার তাড়া। ড্র ম্যাচে জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে প্রতিযোগিতার গতবারের রানার্সআপ পিএসজি।