ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

রক্তাক্ত শোক দিবসে কোন নির্বাচন নয়:রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-01-03, 12.00 AM
 রক্তাক্ত শোক দিবসে কোন নির্বাচন নয়:রিজভী

৭ জানুয়ারির ঐতিহাসিক রক্তাক্ত শোক দিবসে কোন নির্বাচন দেশপ্রেমিক জনগন হতে দিবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, 'আগামী ৭ জানুয়ারী নিস্পাপ কিশোরী ফেলানী হত্যা দিবস। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কাকভোরে ঠান্ডা মাথায় পাখির মতো গুলী করে তাকে হত্যা করেছিল প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত হত্যা বাহিনী। গুলিবিদ্ধ ফেলানী আধাঘণ্টা ধরে কাঁটাতারে ঝুলে ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার করে ছটফট করছিল। এক সময় কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফালানীর নিথর দেহ স্তব্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে কাঁটাতারে ঝুলে ছিল ফালানীর লাশ। ৩০ ঘণ্টা পর বিএসএফ ফালানীর লাশ ফেরত দিয়েছিল। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ দোষ স্বীকার করলেও বিচারের নামে তামাশা করে হত্যাকারীদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। তার উপযুক্ত বিচার হয়নি। শেখ হাসিনা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। সেই ৭ জানুয়ারি আমাদের কিশোরী ফেলানীরনারকীয় হত্যা দিবস। ৭ জানুয়ারির ঐতিহাসিক রক্তাক্ত শোক দিবসে কোন নির্বাচন দেশপ্রেমিক জনগন হতে দিবে না।

 

বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

 

রিজভী বলেন, 'মুক্তিকামী দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের কাছে আমাদের আহবান-আগামী ৭ জানুয়ারি আপনার-আমার প্রিয়তম বোন ফেলানী হত্যা দিবসে তাকে স্মরণ করে স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকারে এবং গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের প্রত্যয়ে নির্বাচন বর্জন করুন ।

 

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'দেশ-বিদেশের গণতন্ত্রকামী শক্তিকে ধোকা দেয়ার জন্য শেখ হাসিনার স্বঘোষিত ডামি নির্বাচনে স্বত:উচ্ছসিত আনন্দ নেই। শুধুই মিথ্যার বঞ্চনা আর আত্মার লাঞ্ছনা, জনগণকে অপমান এবং মিথ্যার অবদান। এই অভিনব মডেলের নির্বাচন নিয়ে এতো দিন এতো জয়ঢাক-দুন্দুভি-ডঙ্কা বাজানোর পর ভোটের তরী ডুবতে চলেছে। তাদের খুদ উচ্ছিস্টভোগী-কুঁড়ো পার্টির প্রার্থীরা দলে দলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এক কোম্পানির চার প্রোডাক্ট, নৌকা-লাঙ্গল-ঈগল ও ট্রাকের এই নির্বাচনী তামাশা ইতোমধ্যেই গণপ্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসর অপশক্তি একদিকে আবোলতাবোল বকতে শুরু করেছে। অপরদিকে দেশজুড়ে নির্বাচনে' কে 'আসল' আর কে 'ডামি' এসব নিয়ে প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে সারাদেশে কামড়া-কামড়ি, সন্ত্রাস-সংঘর্ষ-হানাহানি-খুনোখুনি চলছে সমানে। 

 

রিজভী বলেন, 'আওয়ামী অপশক্তি এখন নিজেরাই নিজেদের পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার হুংকার দিচ্ছে। আওয়ামী মাফিয়া চক্র বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপিকে তাদের মিথ্যাচার-অপপ্রচার আর প্রতিহিংসার টার্গেটে পরিণত করেছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নাকি দেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। আর ওবায়দুল কাদেরের আশংকা গুপ্তহত্যার। গতকাল যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, অচিরেই নিষিদ্ধ করা হবে বিএনপিকে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এখন পর্যন্ত বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার কোনো চিন্তা আমাদের নেই। তার মানে যে কোন সময় তাদের চিন্তার পরিবর্তন হতে পারে।

 

তাদের এ ধরনের বক্তব্য উদ্ভ্রান্ত প্রলাপ, দেশে ক্রমাগতভাবে তামসিকতা থাকার আলামত। গণতন্ত্রকামী জনগণের সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ আদিম অসভ্য অবস্থা দেশে টেনে আনতে চাচ্ছে। 

 

তিনি বলেন, 'গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশের আগে ওবায়দুল কাদের হুমকি দিয়ে বলেছিলো, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পরিণতি শাপলা চত্বরের চেয়েও ভয়াবহ হবে।ওবায়দুল কাদের তার সেই অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনী হুমকি কার্যকর করেছিল। পোষ্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে গ্রেনেড বোমা হামলা চালিয়েছিলো। আওয়ামী অপশক্তি এখানেই থেমে থাকেনি। বিএনপিকে ফাঁসানোর জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। নির্মমভাবে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করেছিল। এভাবে একটি উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উল্টো বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়ে হয়রানি-গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে।

 

রিজভী বলেন, 'বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলোর আশংকা  ভাগবাটোয়ারার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে হানাহানি খুনোখুনি শেষ পর্যন্ত মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গণ বিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ইচ্ছেকৃতভাবে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। 

 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন,'ওবায়দুল কাদেরের আগাম কথায় আরো আশঙ্কা বেড়েছে আওয়ামী লীগের গুপ্তবাহিনী নিজেরাই নিজেদের 'নৌকা-লাঙ্গল-পাগল-ট্রাক-ঈগল' প্রার্থীদেরকে হত্যা বা গুপ্তহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। সুতরাং জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। সজাগ থাকুন। সম্ভব হলে আওয়ামী অপকর্মের সাক্ষ্য প্রমান রেকর্ড করে রাখুন।

 

আর বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে হুমকী দিচ্ছে সেটি ভয় পেয়ে আওয়ামী লীগেরই আর্তচিৎকার। এই ধরনের চিন্তা ও অপতৎপরতা সংবিধানবিরোধী, আইনের শাসনের পরিপন্থী। সরকার দীর্ঘদিন ধরেই একদলীয় ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। তবে তারা জনগণের প্রতিরোধের কারণে সফল হবে না। জনগণের রক্তে সংগ্রামের বীজ রয়েছে, সেই বীজই অঙ্কুরিত হয়ে জনগণকে প্রবল শক্তিতে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হবে।

 

তিনি বলেন, 'দেশে কাদের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে কারা রাজনীতি করবে কিংবা করবেনা এটি কোনো ভোট ডাকাত-সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ শাসকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে নয়, এটা নির্ভর করবে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। ১৯৭৫ সালে আওয়ামীলীগ নিজেরাই নিজেদেরকে নিষিদ্ধ করে বাকশাল করার পর স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় দেশে পুনরায় স্বনামে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিলেন সেই ইতিহাস স্মরণ করুন। জিয়াউর রহমান করুনা করে আওয়ামী লীগকে স্বনামে রাজনীতি করার সুযোগ না দিলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নামে কোন দল থাকতো না। মনে রাখবেন র্যাব-পুলিশের বন্দুকের জোরে নয়, শত জুলুম নির্যাতনের পর বিএনপি টিকে আছে সারাদেশের কোটি কোটি জনগণের সমর্থনে। বিএনপি কারো করুনার উপর নির্ভর করে রাজনীতি করেনা। 

 

রিজভী বলেন, 'বিএনপি নিখাঁদ দেশপ্রেমিক দল। বিএনপি জনগণের ভালোবাসায় ধন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষকের দল। বিএনপি মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার দল। বিএনপি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের দল। বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য বাংলাদেশের জনগণ। বিএনপির শেকড় দেশের ভেতরে। বিএনপির শেকড় গণতন্ত্রকামী জনগণের হৃদয়ে। শুধু মাত্র বিনা ভোটে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য গত ১৫ বছর ধরে অব্যাহতভাবে সংবিধান লংঘন করে চলেছেন। সংবিধানকে দুমড়ে মুচড়ে কাগজের নৌকা বানিয়েছেন। তিনি ভোটাধিকার হরন করে দেশের জনগনকে রিফিউজিতে পরিনত করেছেন।

 

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, 'পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানের ৭(ক) (২)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে দুই বার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত। আগামী ৭ জানুয়ারী তথাকথিত একদলীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি তৃতীয়বার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করতে যাচ্ছেন। তার দল ভারি করার জন্য উক্ত ৭(ক) (১)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘনের উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্রের দায়ে সংশ্লিষ্ট কুশীলবরা বিশেষত প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারগন, মন্ত্রিপরিষদ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, আইন, নির্বাচন কমিশন সচিব, সেনা প্রধান, পিএসও, পুলিশ  প্রধান, ডিজি র‌্যাব, ডিজি বিজিবি, ডিজি আনসার, ডিজি এনএসআই, ডিজি ডিজিএফআই ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এসপি-ডিসি ডিআইজি-বিভাগীয় কমিশনারগণ সহ সবাই সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।

 

রিজভী আরও বলেন, 'সরকারী শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদেয় অনবরত অবৈধ আদেশের ফলে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ অবৈধ আদেশ পালনের দায়ে আজ অভিযুক্ত। এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী সকল চাকুরীজীবিদের তার দুস্কর্মের সহযোগি করে কঠিন শাস্তির খড়গের তলে নিয়ে আসা নিশ্চিত করে ফেলেছেন। সামনের দিনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তার এই সকল সহযোগীদের। ১৮ ডিসেম্বর থেকে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দানের মাধ্যমে মূলত অঘোষিত জরুরী অবস্থা জারীর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যা সংবিধানের ৩৭/৩৮/৩৯ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সুতরাং প্রজাতন্ত্রের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগনকে বলবো-অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর অবৈধ আদেশ পালন থেকে আপনারা বিরত থাকুন। আপনারা একজন একনায়কের অবৈধ ক্ষমতা লিপ্সা চরিতার্থ করার সহযোগী হয়ে ১৮ কোটি জনগনের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না।আগামী ৭ জানুয়ারীর পুর্বনির্ধারিত ফলাফলের পাতানো নির্বাচনে কোন সহযোগিতা করবেন না।