আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের ভোটের আগের পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর আতঙ্কে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না অন্যান্য প্রার্থীরা।স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলার পর এবার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহার যোগসাজসে এমন মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সন্ত্রাসীরা ততই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে চার্জশিটভুক্ত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বর্তমান সংসদ সদস্যের পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে। যার ছবি নিয়মিত বিভিন্ন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুঁইয়ার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় তার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হামলা করা হচ্ছে। জীবন বাঁচাতে অনেকে এখন এলাকা ছাড়া।জানা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়ার কেটলি মার্কার প্রচারণার সময় গত ২৫ ডিসেম্বর সাড়ে ১১টা চানপাড়া রাসেল নগর ইউনিয়নে যান ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রচারণা চালানোর সময় চার দিকে থেকে ঘিরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা করে গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাস শমসের আলী ও তার বাহিনী। শমসের ও তার লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে শমসের ও তার লোকজন প্রচারণা এবং গণসংযোগকালে মুক্তিযোদ্ধা হাসান মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধার আজিজুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াসহ উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মারধর করেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেন। এতেই ক্ষ্যান্ত হননি, তারা হাসান মাহমুদের পিছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের অন্ডকোষে লাথি দিয়ে গুরুতর আহত করেন।
এদিকে, গত ২৯ ডিসেম্বর রাত ২টায় উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কালনি বাজারে অবস্থিত কেটলি প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় একদল দুর্বৃত্ত। আগুনে ক্যাম্পটির ভেতরের আসবাবপত্রসহ সব কিছু পুড়ে যায়। রাতে ক্যাম্পটি বন্ধ থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অগ্নিকাণ্ডের আগে নৌকার সমর্থক থানা যুবলীগের সহ-সভাপতি কামরুল হাসান নয়ন, দাউদপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জামান, ইয়াকুব, আজিম, মোতাহার, ইয়াকুব মোল্লা, আরএসআই রাকিব বিভিন্ন সময় কেটলি মার্কার কর্মী সর্মথকদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। এ ক্যাম্পটি স্থাপনের পর থেকে ক্যাম্পটি বন্ধ করতে তারা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। রাতে তারাই ক্যাম্পটি পুড়িয়ে ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার।
কেটলি প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিলেও ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ৩টায় রূপগঞ্জ থানায় নৌকার সমর্থকরা। ওই সময় তারা শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মী ও সাবেক নাওড়ার সাবেক মেম্বার মোশারফ হোসেন ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।তথ্য সূত্র বলছে, ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার অভিযোগ করা হলেও ঘটনার প্রায় ২১ ঘণ্টা পর মোশারফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আলী আজগর, সাখাওয়াত উল্লাহ, নাজমুল, আমির হামজাসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১৫ জনের নামে মামলা করা হয়। রূপগঞ্জ থানার মামলা নং ৪৭/৮০১।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রূপগঞ্জের নাওড়ার সাবেক মেম্বার মোশারফ হোসেন বলেন, আমার নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা নিজেদের ক্যাম্পে নিজেরাই আগুন দিয়েছে। তার পরে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে।তিনি বলেন, যেই ঘটনায় আমাদের নামে মামলা হয়েছে। একই দিনে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর রাতে গাজীর সন্ত্রাসীরা আমাদের ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসনের নীরবতায় সন্ত্রাসীরা নিয়মিত আমাদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূইয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় আয়েশা আক্তার নামে এক নারীর উপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কলাতলী এলাকায় ইউএস-বাংলা আবাসনের বালুর মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আক্রমণকারীরা গোলাম দস্তগীর গাজীর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য বলে দাবি করেছেন আহত নারীর স্বামী আব্দুর রহমান। এছাড়াও রূপগঞ্জ দক্ষিণ পাড়ার মোস্তাফা নামে কেটলির আরেক কর্মীকে আহত করে নৌকার সমর্থকরা।
কেটলি প্রতীকের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহার যোগসাজসে আমার কর্মীদের এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলাসহ বাড়ি ঘরে হামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে রূপগঞ্জ থানার ওসি গাজীর কর্মীদের মত অবস্থান নিয়ে প্রকাশেই কাজ করছেন। শিল্পপতি গাজীর কাছ থেকে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়ে তারা কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন শাহজাহান ভূইয়ার কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, আমাদের ক্যাম্পে আগুন দিয়ে পরের দিন আমার কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত এ প্রশাসনের রদবদল করা জরুরি।