সময় তখন ৫টা ২০মিনিট। শীতল হওয়ায় চারপাশে কুয়াশাচ্ছন্ন। সমানে গর্জন দিচ্ছে ঢেউ। এরমধ্যে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হলো ২০২৩ সালের শেষ দিনের সূর্য। প্রত্যাশা-প্রাপ্তিসহ নানা ঘটন-অঘটনকে চাপিয়ে শেষ হল আরও একটি বছর। বরাবরের মতো কক্সবাজারে এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে দৃশ্যমান কোনো আয়োজন নেই। এরপরও সৈকতে ব্যাপক পর্যটক উপস্থিত রয়েছে। সেন্টমার্টিনেও অবস্থান করছেন অনেক পর্যটক। বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে হাজির হন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।সোমবার সূর্যোদয়ের মধ্যদিয়ে পথচলা শুরু হবে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের। ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসেব পেছনে ফেলে পরিচ্ছন্ন আগামীর প্রত্যাশায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সবাই। উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকলেও নিজেদের মতো করে নতুন বছরকে বরণ করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের সব ধরণের আয়োজন বন্ধ। তবে অতীতের মতো তারকা হোটেলগুলো স্ব-উদ্যোগে অতিথিদের জন্য আভ্যন্তরীণ আয়োজন রেখেছে। বহিরাগতদের জন্য বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে সাশ্রয়ী দামে গালা ডিনারের আয়োজন করেছে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেড। একই ধরনের আয়োজন রেখেছে সি পার্ল হোটেল অ্যান্ড স্পাসহ আরও কয়েকটি তারকা হোটেল।কক্সবাজারের হোয়াইট অর্কিড হোটেলে জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, মৌসুমের এ সময়টা পর্যটকরা বেড়াতে কক্সবাজারকে তালিকায় রাখে। পর্যটকদের ৭০-৭৫ শতাংশ এক থেকে দুদিনের ট্যুরে সেন্টমার্টিন যান। এবারও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকের মিলনমেলা বসেছে। প্রায় হোটেলে ৮০-৮৫ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে।এদিকে বাড়তি পর্যটক মাথায় রেখে সার্বিক নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম।হোটেল-মোটেল জোনের মোহাম্মদীয়া গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সময়ের মতো এবারও বছরের শেষ দিন সারাদেশ থেকে লোকজন কক্সবাজার সৈকতে এসেছেন। অনুষ্ঠান না থাকলেও বিগত সময়ের মতো থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে সৈকতে অসংখ্য পর্যটক এবং স্থানীয়রাও উপস্থিত হয়েছেন।রোববার বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা-লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিপুল দর্শনার্থী এসেছেন সৈকতে। শীতের মাঝেও অনেকে গোসল করছিলেন সমুদ্রে। অধিকাংশই বালুচরে দাঁড়িয়ে সাগরের গর্জন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন।কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, পেশাগত কারণে পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারি না। তাই বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে পরিবারসহ সৈকতে এসেছি।
চাকরির সুবাদে কক্সবাজারে অবস্থান করায় বিগত বছরের ন্যায় এবারও বছরের শেষ সূর্যাস্তের সাক্ষী হতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বালিয়াড়িতে এসেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা। ২০২৩ সালের বিদায়ী সূর্যাস্তের সাক্ষী হতে পারা উপভোগের বলে উল্লেখ করেন তিনি।কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থার্টি ফার্স্টের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকত কিংবা পর্যটন স্পটের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ড সংগীতের আয়োজন করা নিষেধ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগে বাঁধা নেই। পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।