বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচিতে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। জনগণ নির্বাচনের পক্ষে, ভোট চায়।বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটে হজরত শাহজালালের (র.) এর মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন।বিএনপি-জামায়াত মানুষকে মেরে ভীতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করতে চায় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ’তারা (বিএনপি-জামায়াত) নির্বাচন বানচাল করতে চায়। মানুষকে ভোট দিতে দেবে না। মানুষ কিন্তু ভোটের পক্ষে। মানুষ নির্বাচনের পক্ষে। মানুষ তো তাদের হরতালে সাড়া দিচ্ছে না। মানুষ বরং ভোটের মিছিলে যোগ দিচ্ছে। এরপরও আবার কেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড?’ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ভোট জনগণের অধিকার। সাংবিধানিক অধিকার। সেই ভোট জনগণে দেবে। সেই ভোট দিতে জনগণকে বাধা দেওয়া, তাদের খুন করা, এই অধিকার কারো নাই। এটা বাংলাদেশের কেউ মানবেও না। এটা যারা করবে তাদের একদিন এদেশের মানুষ উৎখাত করবে। ’বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে জনগণ সাড়া দেয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা তো হরতাল দিয়েছে, এদেশের মানুষ হরতাল মানেও নাই। তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। তাদের বোঝা উচিত। এদেশের মানুষ নির্বাচন চায়, ভোট দিতে চায়। ’বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন ঠেকানোর প্রচেষ্টা সফল হবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা কোনো দিন সফল হবে না। হতে পারে না। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জনগণকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না, পারেনি। ’তিনি বলেন, ‘তাদের (বিএনপি-জামায়াত) অভিজ্ঞতা নাই? ২০১৩ সালে পারেনি, ২০১৪ সালে পারেনি। তাহলে আবার কেন এই আগুন দিয়ে পোড়ানো। বেশ ভালোই খেলা চলছে, একজন লন্ডনে বসে হুকুম দেয় আর এখানে তার কিছু চ্যালা আছে আগুন দেয়। বাংলাদেশে এভাবে খেলা, এই দুর্বৃত্তপরায়ণতা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। ’
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচন করবে না, করবে না। কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, আগুন দিয়ে সরকারি সম্পত্তি (ধ্বংস), সরকারি সম্পত্তি মানে কি এটা হচ্ছে জনগণের সম্পত্তি। ’
অগ্নিসন্ত্রাসীদের ক্ষমা নেই
অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি বিভিন্ন জায়গায়। আমরা পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু এই যে হঠাৎ হঠাৎ একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা, এই ঘটনাগুলো তারা এভাবে ঘটাচ্ছে। তারপরও আমাদের চেষ্টা। যারা এই অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত, যারা এই হত্যা করেছে কারো ক্ষমা নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে। ’
রেল-বাসে আগুনের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেলে আগুন দিল, একজন মা সন্তানকে নিয়ে সে আগুনে পুড়ে মারা গেল। মা সন্তানকে কিন্তু বুকের মাঝে চেপে ধরে রেখেছে। এর চেয়ে কষ্টের দৃশ্য আর কিছু হতে পারে না। কী করে একটা মানুষ এসব করতে পারে। ’
তিনি বলেন, ‘আজকে নারী-শিশু, পুলিশের ওপর হামলা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, জনগণের ওপর হামলা এসব কোন ধরনের রাজনীতি। জনগণের কাছে তাদের কর্মসূচি নিয়ে যাবে জনগণ যদি তাদের ডাকে সাড়া দেয় তখন। ’
আবার নির্বাচিত হলে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব
আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বার্তা একটাই দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাবার যে স্বপ্ন আমার বাবা দেখেছেন, সেটা পূরণ করতে চাই। ’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটাই কথা। যে আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে জনগণের কল্যাণ হয়। ২০০৯-এ সরকার গঠন করেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালে আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচন ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জনগণ যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়, আবার যদি সরকার গঠন করতে পারি পুরো বাংলাদেশকেই আমরা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করব। আর কোনো মানুষই ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। এটাই আমাদের নিয়ত; বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে যেন হাসি ফোটে, বাংলাদেশটাকে উন্নত সমৃদ্ধ করা। ’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু সেটাকে কার্যকর করতে হবে। আমি জানি আমাদের সরকার এলে পরেই এটা কার্যকর হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সিলেটে কিন্তু এখন আর কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ নাই। প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘর করে দিতে পেরেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক দিয়েছি তাদের চিকিৎসার জন্য। অর্থাৎ মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো সেগুলো আমরা পূরণ করে যাচ্ছি। যেটুকু বাকি আছে সেগুলো করব ইনশাল্লাহ। ’