‘অতিরিক্ত নকল-নবিশ’রা (এক্সটা মোহরার) কাজ করলে টাকা পায়, না করলে টাকা নাই। অর্থাৎ ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’। অথচ নরসিংদী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অতিরিক্ত নকল-নবিশ’ মো. শফিকুল এতটাই অতিরিক্ত অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন যে, দাপট দেখাতে মাইক্রোবাসে বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম লাগিয়ে চলাচল করেন। তবে কি ভাবে তিনি কোটি কোটি টাকা, অনেকগুলো বাড়ি ও ভূ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তা নিয়ে এখন দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সুনির্দিষ্ট ও সচিত্র অভিযোগ এসেছে। এ রকম একটি অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অভিযোগ ব্যবস্থাপনা শাখা গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি তা সংশ্লিষ্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
একজন অতিরিক্ত নকল-নবিশের গাড়িতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম এবং তার বিপুল পরিমাণের অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয় নিয়ে এলাকাবাসীর মনে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে।
শফিকুল ইসলাম ঢাকা মেট্টো-চ-১৩-৫৩৪৮ মাইক্রোবাসে বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম লাগিয়ে চলাচল করেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা মেট্টো-চ-১৩-৫৩৪৮ গাড়িটিও ব্যবহার করেন। তবে দু’টি গাড়ির কোনটিই তার নিজের নামে নয়। ঢাকা মেট্টো-চ-১৩-৫৩৪৮ মাইক্রোবাসের মূল মালিক মো. আনিসুর রহমান, ঠিকানা: ১৯, ভাদি, নরসিংদী। ঢাকা মেট্টো-গ ২৯-৯৫৯০ প্রাইভেট কারটির মূল মালিক মো. জাকির হোসেন, ঠিকানা: ২/৭, এন এস রোড, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
অভিযোগে দেখা যায়, শফিকুল ইসলামের দাপটে নরসিংদীর রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার তারা সাথে হাত মেলাতে বাধ্য হন। এভাবে তিনি অফিসের ঘুষের টাকা আদায়, অসদাচারণ, জাল-জালিয়াতি ও কুকর্মের মাধ্যমে বহু কোটি টাকা, গাড়ি-বাড়ি ও ভূ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এজন্য ঘুষখোর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ মাস্তান পর্যন্ত সকল পর্যায়ে টাকা-পয়সা দিয়ে তিনি ম্যানেজ করে থাকেন।
নরসিংদী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গড়ে প্রতিদিন ৮০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। ঘুষ বাবদ প্রতিদলিল থেকে প্রতি লাখে নগদ ৫০০ টাকা করে শফিকের মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রারকে দিতে হয়। এছাড়াও প্রতিদলিলে অতিরিক্ত ১৫০০ টাকা দিতে হয়, যে টাকার ১০০০ টাকা যায় দলিল লেখকদের ফান্ডে। এভাবে প্রতিদিন শফিকুল নিজেই লাখ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে পরে সেই টাকা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ‘নিয়ম মাফিক’ ভাগ-বাটোয়ারা করেন। দলিল লেখক সমিতির ফান্ড ও উপদেষ্টা কমিটির ফান্ডের টাকার বড় অংশই প্রভাব খাটিয়ে তিনি ভোগ করছেন। এছাড়া জমির শ্রেণী পরিবর্তন, রেকর্ডের ভুলত্রুটি ও পূর্ববতী দলিলের সামান্য ভুল সংশোধনের জন্য শফিকুলকে মোটা অংকের টাকা না দিলে কাজ হয় না। সাব-রেজিস্ট্রারদের সাথে আঁতাত করে নিজে অথবা নিজের আত্মীয়-স্বজনের মাধমে বিভিন্ন কমিশন দলিল করিয়ে দিয়েও তিনি মোটা অংকের টাকা কামান। স্থানীয় গডফাদারদের অভিপ্রায়ে অফিস সহকারীর স্থলে অবৈধভাবে শফিকুলকে সরকারি টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ক্যাশও তার কাছে থাকে।
নকল নবিশের কাজ পাওয়ার আগে শফিকুলের তেমন কোন পৈতৃক সম্পত্তি ছিল না। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে তিনি নিজের ও স্ত্রী লাভলী বেগম, বোন শামীমা আক্তার ও দুলা ভাই মজিবুর রহমানসহ আত্মীয়-স্বজনের নামে বিভিন্ন সম্পত্তি ক্রয় করেছেন, অভিযোগে যার দলিল নম্বরও দেয়া হয়েছে।
শফিকুল অনেকগুলো বাড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নরসিংদী শাপলা চত্ত্বরের কাছে সাটিপাড়া মৌজায় সম্প্রতি প্রায় ৪ কোটি টাকায় একটি বাড়ি কিনেছেন। লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের কাছে আয়েশা মঞ্জিল, আফিয়া মঞ্জিলসহ তার ৪টি বাড়ি রয়েছে। বাসাইল মৌজায় তার নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। গ্রামের বাড়ি শিবপুর উপজেলার ব্রাক্ষèনদীতে রয়েছে সুদৃশ্য ডুপ্লেক্স ভবন। এসব অভিযোগের ব্যাপারে ফোনে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, আপনারা সাংবাদিক হিসেবে আপনারাই অনুসন্ধান করুন।