ঢাকা, বুধবার ৮ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

‘রাতের ভোট চুরির কথা স্বীকার প্রধানমন্ত্র’র’

ষ্টাফ রিপোটার।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-11-18, 12.00 AM
‘রাতের ভোট চুরির কথা স্বীকার প্রধানমন্ত্র’র’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল অকপটে  স্বীকার করেছেন, অস্ত্র হাতে এবং রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তিনি ক্ষমতার সিংহাসন দখল করে রেখেছেন। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় তিনি বলেছেন,”অস্ত্র হাতে না, রাতের অন্ধকারে না। বাংলাদেশে সরকার গঠন হবে ভোটের মধ্য দিয়েই।” কথায় বলে-ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেওয়া যায় না। সত্য কোনো না কোনোভাবে প্রকাশিত হয়ই।’আজ শনিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিঙে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ইতিপূর্বে নিশিরাতের সরকারের সঙ্গী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ বহু আওয়ামীলীগ নেতা সাক্ষ্য দিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। রাতের অন্ধকারে নৌকায় সীল মেরে বাক্স ভরা হয়েছিল। ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে দেশের মানুষের'। ঢাকাস্থ জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিসহ বিদেশীরাও বলেছেন, পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই রাতের ভোট হয়।এবার নিজের মুখে রাতে ভোট করার মহাসত্যটি স্বীকার করে নিলেন শেখ হাসিনা। সুতরাং তার এই স্বাকারোক্তির পর এই মূহুর্তে ভোটারদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। তার আর ক্ষমতায় থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। শেখ হাসিনা আবারো গায়ের জোরে তার উচ্ছিষ্টভোগি সঙ্গীদের নিয়ে একতরফা ভোটহীন আরো একটি পাতানো নির্বাচনের তামাশা করছেন। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে রাতের গর্ভে সরকারের জন্ম দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে দলহীন নির্বাচনে অভিনব কায়দায় দিনে ভোট ডাকাতি করে ১৫৪ জনকে অটো পাস এমপি বানানো হয়েছিল। ভোট কেন্দ্রে কোন ভোটার দেখা যায়নি। আর এবার চোর-ডাকাত দিয়ে ভিন্ন কোন পন্থায় ভোটের নামে আরেকটি ভাঁওতাবাজীর প্রহসন করতে মরিয়া, বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর মারমুখী হয়ে উঠেছে আওয়ামী সরকার। ভোটারবিহীন নির্বাচন করার জন্য বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করতে  পোড়ামাটি  নীতি গ্রহণ করে ঘৃণ্য-দুষিত বাতাবরণ তৈরী করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কেমন হবে তা তো দেশবাসী জানে-বাঘ তার ডোরা কাটা দাগ ফেলে আসতে পারে না।

 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আবারো ক্ষমতায় থাকার সীলমোহর নিতে হাজার হাজার বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা প্রহরায় একটি রণক্ষেত্রের দৃশ্যপট রচনা করে তার মাঝে বসে একদলীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করিয়েছে আজ্ঞাবহ কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দিয়ে। আওয়ামীলীগের ফরমায়েশি তফসিল দেশের ১২ কোটি ভোটার ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। গত ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্ছিত মানুষ রাজপথে নেমেছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং একনায়ক শেখ হাসিনার পদত্যাগের ন্যায্য দাবীতে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার ভোট ডাকাতির পথ কন্টকমুক্ত এবং জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিরোধী দল-মত ও পথে বিশ্বাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে এক চতুর নীলনকশা অনুযায়ী বিচার-আচার-পুলিশ-প্রশাসনসহ সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে তালুবন্দী করে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারাদেশে এক মহা ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে। পুলিশকে নেকড়ের মতো জনগণের ওপর লেলিয়ে দেয়া হয়েছে।পুলিশের বিস্ময়কর অপতৎপরতায় প্রমাণিত হচ্ছে-শেখ হাসিনার সরকার একতরফা নির্বাচন ঘিরে এক সর্বনাশা নিষ্প্রাণ, নিস্তেজ পরিস্থিতি তৈরী করতে হিংস্র হয়ে উঠেছে। অতীতের মতোই সারা বাংলাদেশের জনগণকে বন্দী করে, গৃহছাড়া করে ভোট ডাকাতির উৎসব সফল করতে চায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা, হামলা নির্যাতন এবং পাইকারী গ্রেফতারের চিরুনী অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আওয়ামী দলবাজ  আইন সৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। সারাদেশে চলছে ইতিহাসের জঘন্যতম ভয়াবহ মামলাবাজী আর আটক বানিজ্য। দেশের প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলার দৃশ্যপট অভিন্ন। এই গায়েবী মামলা গ্রেফতার নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশ, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও নিশিরাতের সরকার নিজেকে রক্ষা করতে এই অপকর্মে বেপরোয়া। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার বানিজ্যের তান্ডবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ছাড়া গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বল জনপদে কেউ বাড়ীঘরে থাকতে পারছে না। ফলে ব্যবসা বানিজ্য, কাজকর্ম করতে পারছে না। পরিবার থেক বিচ্ছিন্ন থাকায় অসংখ্য পরিবারকে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। পুলিশের এখন পৌষ মাস, আর জাতির সর্বনাশ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আটক করে কারো কাছ থেকে ১ লাখ, কারো কাছ থেকে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে  মিথ্যা মামলায় জেলখানায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে। দেশের জেলখানাগুলোতে ধারন ক্ষমতার কয়েকগুন বিরোধীদলের নেতাকর্মীতে উপচে পড়ছে। মহা বিপর্যয়ের সৃস্টি হয়েছে। অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের না পেয়ে তার স্বজন আত্মীয়দের আটক করে মারধর করছে পুলিশ। তাদেরকে গ্রেফতার বানিজ্যের লাইসেন্স দিয়েছে শেখ হাসিনা। কার্যতঃ দেশে আইনের শাসনের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। গায়েবী মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন দু:সহ জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে দেয়া হচ্ছে না, ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে তাদেরকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তবে এতোসব করে এবার আর পার পাওয়া যাবে না। জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের দুর্বার আন্দোলনে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে। আপনারা যে তফসিল ঘোষণা করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন। নির্বাচন স্থগিত করে আগে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এই ফরমায়েশী তফসিলে বাংলাদেশে এক তরফা কোন নির্বাচন হবে না। জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।

 

 

 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার-হাজার নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ চলমান আন্দোলনের একদফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একতরফা নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলের প্রতিবাদে আগামীকাল রবিবার (১৯ নভেম্বর) ভোর ৬ টা থেকে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৬ টা পর্যন্ত মোট ৪৮ ঘন্টা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমি সারাদেশের নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি  আহবান জানাচ্ছি।