জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, ‘সরকার চাইলেও নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবে না।’ শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বনানীর জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলটিতে আইনজীবীদের যোগাদান অনুষ্ঠানে নির্বাচন নিয়ে এ মন্তব্য করেন জি এম কাদের।এসময় জিএম কাদের বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এটা বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আমরা এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যক্ষ করছি। বিচারকার্য সবার জন্য সমান নয়।’এক সরকার বেশিদিন থাকলে স্থিতিশীলতা থাকে এমন বক্তব্য ভুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার বেশিদিন থাকলে অস্থিতিশীলতার বীজ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। স্বাভাবিকতা হচ্ছে পরিবর্তন। এক নেতা চলে যাবে অন্য নেতা আসবে। যেটা ভারতে, যুক্তরাষ্ট্রে আছে।একজন যদি দীর্ঘদিন থাকে, এবং জোর করে রাখা হয় তাহলে মানুষের ভেতরে ধুকে ধুকে আগুন জ্বলতে থাকে। কোনো না কোনো সময় হঠাৎ করে এটার বিস্ফোরণ হয়, স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। কোনো কারণে যদি সরকার পরিবর্তন করতে হয় তখন চিন্তা করতে হয় সামনে দেশ কোথায় যাবে। আমরা চাই এমন সরকার, যারা পরিবর্তন হলেও দেশ স্থিতিশীল থাকবে।’প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন বলেন, ‘আইন ও সংবিধানের কথা বলে লাভ নেই। আইন ও সংবিধান হয়তো ঠিকই আছে। আমরা রেজাল্ট পাচ্ছি ইলেকশনের না সিলেকশনের। বিভিন্ন সময়ে কতগুলো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে যে তারা চাইলেও নির্বাচন সুষ্ঠ করতে পারবে না।’
অবকাঠামো উন্নয়ন মানুষের উন্নয়ন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসল উন্নয়ন হলো মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। আমার পাশে ১০০ তলা বিল্ডিং হলো, যার পাশ দিয়ে আমরা হাঁটতেও পারি না। এত গাড়ি হলো যে রাস্তায় নামতেই পারি না। এ উন্নয়নের কোনো অর্থই হয় না।’এর আগে একই অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন ৫৫ জন আইনজীবী। যোগ দেওয়া এ আইনজীবীরা বলছেন, ‘বিবেকের তাড়না ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা দলটিতে যোগ দিয়েছেন’। জাতীয় পার্টি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে বলেও মনে করেন তারা।অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘একটা ভোট হয় না। উপ-নির্বাচনগুলোতেও ভোট জালিয়াতি করে পাস করতে হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলই নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।’
জিএম কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি ফেয়ার না হয়, আমরা ভোট পাবো না। আমাদের ভোটার নিরীহ। আমার ভোটাররা মারমুখী না। ক্ষমতাসীন দলের ভোটররা নিরীহ না, তারা মারমুখী। নির্বাচন যদি মিনিমাম ফেয়ার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলেই চিন্তা করবেন। এছাড়া চিন্তা করে লাভ নেই।’ জাতীয় পার্টি কারও ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হতে চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা মনে করে জাতীয় পার্টির আসন নেই, তার সঙ্গে আমার প্রেমও নেই। আর ছাড়তে চাই না। নিজেরাই কিছু একটা করতে চাই।’অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে সরকারকে। আপনিই খেলোয়াড়, আপনিই রেফেরি হবেন এটা করা ঠিক হবে না’।
সূচনা বক্তব্যে আইনজীবী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিবেকের তাড়নায় ও সার্বিক বিবেচনায় প্রায় অর্ধশত আইনজীবী এ দলে যোগ দিয়েছেন। আরও নেতাকর্মী শিগগির যোগ দেবেন। জাপা প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যে কাজ করেছেন আজ পর্যন্ত কোনো সরকার তা করতে পারেনি।’ যোগ দেওয়া আইনজীবী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জাপা চেয়ারম্যান মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ জিএম কাদেরের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।’
আরেক আইনজীবী সুলতান আহমেদ খান বলেন, ‘এ দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনো নেতা আমরা খুঁজে পাইনি। কোনো দল খুঁজে পাইনি। উল্কার মতো খুঁজে বেড়িয়েছি। অনেক যোগ-বিয়োগ করে, ক্যালকুলেশন করে আমরা খুঁজে পেয়েছি জিএম কাদেরকে।’তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ২০১৮ সালে ভোট দিতে পারে নি। এ যদি হয় গণতন্ত্র, মানুষ যাবে কোথায়। সব উন্নয়ন বিলীন হয়ে যাবে যদি মানুষ ভোট না দিতে পারে। শুধু আইনজীবী না, আমি বিশ্বাস করি জাতীয় পার্টিতে সব শ্রেণি পেশার মানুষ যোগ দেবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কমপক্ষে ১৫১ আসন পাবে। জিএম কাদেরকে আমরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।’