গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বুধবার (৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুরো নাওজোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, আহতাবস্থায় পাঁচজন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য প্রবীর (৩০), ফুয়াদ (২৮) ও খোরশেদকে (৩০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশিকুল (২৭) ও বিপুলকে (২৪) হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ফুয়াদের অবস্থা বেশি গুরুতর, তিনি ডান হাতের আঙুলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।জানা গেছে, ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালেও আন্দোলন করেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এসময় এক নারী শ্রমিক নিহত হন। এরপর পরিস্থিতি পুরোই স্বাভাবিক ছিল।কিন্তু দুপুরের পর কোনাবাড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান শ্রমিকরা। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায়ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা বৃষ্টির মতো পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। সংঘর্ষে পুলিশের পাঁচ সদস্য গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শ্রমিকরা পিছু হটেন। পরে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শ্রমিকরা ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজের সামনের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন।গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, বুধবার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মোট আটজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সকালে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন ও বিকেলে নাওজোড় এলাকায় পাঁচজন আহত হন। বিকেলে যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এদের শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও এপিসি কারে বিস্ফোরণেও আহত হয়েছেন তারা।পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশের এপিসি কারের ভেতর যে সকল পুলিশ সদস্যরা ছিলেন তাদের অসাবধানতায় এপিসি কারের ভেতর বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।এদিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা-জয়দেবপুর সড়ক দিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন কার্যালয়ের দিকে যান। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ঢিল ছুড়ে কারখানাগুলোর জানালার কাঁচ ভাঙচুর করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা জয়দেবপুরের দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কোনাবাড়ি, নাওজোর ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকরা অবস্থান করছিলেন।