সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলন কোন দিকে যাচ্ছে। আন্দোলনর ধারাবাহিকতায বিএনপি-জামায়াত তাদের যুগপৎ কর্মসূচির সঙ্গী রাজনৈতিক দলগুলো চেহারা ২৮ অক্টোবরের পর আর তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির সময় পুলিশের সাথে হামলায় বিএনপির নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে ও দাবি আদায়ে প্রথমে ২৯ অক্টোবর হরতাল, এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয় তারা। এই দাবিতে আগামী রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনকারী দলগুলো। সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হয়েছে অনেক মামলা। সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে দুশ্চিন্তা ভর করেছে বিএনপি শিবিরে। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হলেও চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন তার গতিতে চলবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে হামলা করে বিএনপিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এরপর বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে সরকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ২৯ অক্টোবর বিএনপির হরতাল কর্মসূচিতে নেতারা সেভাবে মাঠে না থাকলেও সারাদেশের সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করেছে। এরপর ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিও নজিরবিহীনভাবে সারাদেশেই পালিত হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির আন্দোলনের প্রতি সাধারণ মানুষের নীরব সমর্থন রয়েছে।
আন্দোলনরত দলটির নেতারা আরও বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত টানা কর্মসূচি থাকবে। যদি তফসিল ঘোষণা হয় তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নেতা-কর্মীদের যেকোনো কৌশলে গ্রেপ্তার এড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলায় জেলায় আরও কঠোরভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।সূত্র বলছে, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি কার্যত পুরো অচলের চিন্তা করছে দলটি। কর্মসূচি পালনকালে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকায় চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পক্ষে বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার ১৫ বছর ধরেই হামলা-মামলা করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাই জেল-জুলুমের পরোয়ানা করছেন না তারা। বিএনপি যখন চূড়ান্ত আন্দোলনে নেমেছে তখন সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কথা চিন্তা করেই মাঠে নেমেছে। মামলা ও শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ চিন্তার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সরকারের হামলা-মামলা নিয়ে আমরা একেবারেই চিন্তিত নই। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরী করেও চলমান আন্দোলন ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। আর এখন নেতাদের গ্রেপ্তার করে আন্দোলন স্তব্ধ করার প্রশ্নই আসে না। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক স্তরের নেতৃত্ব প্রস্তুত রয়েছে।