সরকারকে আগামী সাত দিনের মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। নাহলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ থেকে চরমোনাই পীর এই আল্টিমেটাম দেন।তিনি বলেন, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করে ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবন্ধিত এবং প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয় গঠিত জাতীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপির সব নেতাদের মুক্তি ও রাষ্ট্রপতিকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। দাবি না মানলে সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধীদলের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।তিনি আরও বলেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ও অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সমর্থন ঘোষণা করছি। দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এই দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা, সাম্য প্রতিষ্ঠা ও গরিবের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ক্ষমতায় থাকতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতার মজা পেয়ে গেছে। গোটা দেশের মানুষ জেলখানায় আবদ্ধ। এদেশের মানুষের স্বাধীনতা নাই। এই জেলের তালা ভাঙতে হবে। কোন ছলচাতুরি চলবে না। আমরা কারও বিরুদ্ধে নই। এই আন্দোলন যারা ভোট দিতে চায় তাদের জন্য।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিরেপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ায় বিদেশি শক্তি নাক গলাচ্ছে। আপনি ব্যাকডোর দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে আমরা লড়াই করবো।
দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ এসেছে। কাউকে ভাড়া করে আনা হয় নাই। সবাই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পির সাহেবের চরমোনাইয়ের নির্দেশনা পালন করেছে। আগামীতে পির সাহেবের ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচি আমরা পালন করবো।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, এ সরকারকে দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। আপনাদের অধীনে নির্বাচন তো দূরের কথা, আপনাদের আর এক মুহূর্তে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যত দ্রুত ক্ষমতা থেকে যাবেন তত দ্রুত দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। সরকারবিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেননি। দেশের আইন, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ গোটা দেশকে ধ্বংস করেছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা পদত্যাগ করেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে বসেন।
এ সময় চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো-
১. ১০ নভেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করে এবং জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে সব নিবন্ধিত এবং প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
২. বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপিসহ সব শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৩. সরকার এসব দাবি মেনে না নিলে, আন্দোলনরত সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরে কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
৪. জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দল সমূহের সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করছি।