রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে নড়বড়ে করেছে। যার আঁচ পড়েছে ভারতেও। চড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং পড়তি রফতানির ঝুঁকি এখনও বহাল। পরিস্থিতি শোধরানোর আগেই ঠিক ২০ মাসের মাথায় ফের বাজল যুদ্ধের দামামা। ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইনের সংঘাত অর্থনীতিকে আর কতটা তছনছ করবে, মাথা তুলল সেই প্রশ্ন। যার সামনে দাঁড়িয়ে সোমবার প্রায় ৫০০ পয়েন্ট পড়ে গেল ভারতের শেয়ার বাজার। সূচক টালমাটাল হল বিশ্ব জুড়ে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষ অর্থনীতির পথে বিছাতে পারে নতুন কাঁটা।সম্প্রতি ইজ়রায়েলে আক্রমণ করেছে প্যালেস্টাইনের হয়ে অস্ত্র ধরা জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস বাহিনী। সে দেশে ঢুকে পড়েছে তারা। শুরু হয়েছে লড়াই। ক্ষুব্ধ ইজ়রায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করায় বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, পশ্চিম এশিয়ায় শুরু হওয়া এই সংঘাত রক্তক্ষয়ী এবং দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। যা বাড়াতে পারে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কট। তার ধাক্কা এড়ানো কঠিন হবে ভারতের পক্ষেও। বৈদেশিক বাণিজ্য মার খাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে তেলের দাম চড়তে পারে। সার্বিক ভাবে যা মূল্যবৃদ্ধিকে ঠেলে তুলতে পারে। তবে অন্য অংশের আশা, পুরোদস্তুর যুদ্ধের আশঙ্কা কম। যদিও শেয়ার বাজারকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বইতে হতে পারে। এ দিন সেনসেক্স ৪৮৩.২৪ পয়েন্ট পড়ে হয়েছে ৬৫,৫১২.৩৯। নিফ্টি ১৯,৫১২.৩৫। পতন ১৪১.১৫।
রফতানিকারীদের সংগঠন ফিয়ো-র ডিরেক্টর জেনারেল এবং সিইও অজয় সহায় জানান, “এমনিতেই চলতি অর্থবর্ষে বিশ্ব বাণিজ্যের লক্ষ্য ছেঁটেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। বাণিজ্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস ১.৭৪% থেকে কমিয়ে ০.৮০% করেছে। ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতে তার আরও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।’’ সে ক্ষেত্রে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার কমার আশঙ্কা আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের। তিনি বলেন, “শুধু রফতানি কমবে না। জোগানে টান ধরলে অশোধিত তেল-সহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির খরচ বাড়বে। কাঁচামালের অভাবে দেশের শিল্পোৎপাদন ধাক্কা খেতে পারে।’’
অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরীর অবশ্য আশা, এই সংঘাত দীর্ঘ যুদ্ধের আকার নেওয়ার আশঙ্কা কম। তবু তাঁর বার্তা, “যদি আরব দেশগুলি এতে অংশ নিতে শুরু করে, তা হলে পরিস্থিতি ঘোরালো হবে। ইজ়রায়েলের মতো রফতানির বড় বাজারের সুবিধা সাময়িক ভাবে হলেও হারাবে ভারত। উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আমদানি বন্ধ হলে সমস্যায় পড়বে কৃষি এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্র।’’
শেয়ার সূচক এখন অস্থির এবং অনিশ্চিত থাকবে বলেই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী। তিনি বলেন, “সর্বত্র শেয়ারে লগ্নি ধাক্কা খাবে। যুদ্ধের ফলে অশোধিত তেলের দাম বাড়লে মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও আশঙ্কা থাকবে। সে ক্ষেত্রে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ফের সুদ বাড়াতে পারে। নতুন করে মার খাবে শিল্পে লগ্নি। ঋণগ্রহীতার ধারের খরচ বাড়ায় চাহিদা আরও ঢিমে হতে পারে।’’ তবে ভারতের চাঙ্গা আর্থিক অবস্থা ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও ভরসা আশিসের।