দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সভা-সমাবেশ চলছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই রাজনৈতিক সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ অনেক সংগঠন মাঠে রয়েছে। কিন্তু এসব সমাবেশ ও বিক্ষোভের নামে কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক সমাবেশ, কিংবা সাধারণ দাবি-দাওয়া আদায়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে যেকোনও সভা-সমাবেশের আগে ডিএমপিকে অবহিত করতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে। কোনও ধরনের সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ বা আন্দোলনের ঘটনা ঘটলে, বিষয়গুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। যারা এসব ঘটনার নেতৃত্বে রয়েছেন, তাদের পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এসব কর্মসূচির সঙ্গে আর্থিক কোনও বিষয় জড়িত রয়েছে কিনা, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে শিল্পাঞ্চলগুলোও নজরদারি রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে রাজধানীর ভেতরে যেসব গার্মেন্টস শিল্প কারখানা রয়েছে, সেগুলোতেও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় গার্মেন্টস শ্রমিকরা। সামনে এ ধরনের আরও কোনও ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যদিও ডিএমপি এলাকায় অবস্থিত শিল্প কারখানা কিংবা গার্মেন্টসের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ততটা ওয়াকিবহাল নয় স্থানীয় থানা পুলিশ। কোনও ঘটনা ঘটার পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে থাকে পুলিশ। যেহেতু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় শিল্প পুলিশের কাজ করার কোনও এখতিয়ার নেই, ফলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের যেকোনও আন্দোলন সামাল দিতে হয় ডিএমপির সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রেসক্লাব কিংবা শাহবাগে যে সংগঠনগুলো কর্মসূচি পালন করে, তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের জন্য বলা হয়ে থাকে। কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলেই অনেকে দাবি-দাওয়া জানাতে সড়কে অবস্থান নেয়। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে যানজটে আকটা পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। আর এর দায়ভার পড়ে গিয়ে পুলিশের ওপরে।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি আগুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মার্কেট এবং শপিং সেন্টারগুলোতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিশেষ করে রাতে এবং ভোরবেলায় আগুন লাগার ঘটনা ঠেকাতে টহল বাড়ানো হয়েছে। আগুনের ঘটনাগুলোর পেছনে কারও হাত রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরীদের যেকোনও পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় কেউ কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত থাকলে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, এমনকি ইন্ধনদাতাদেরও বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে।’
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, ডিএমপি এলাকায় যারাই সভা-সমাবেশ করবে, তাদের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।