নাটোরে হত্যা ও বিস্ফোরকসহ পৃথক দুই মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির জামিন আবেদন বাতিল করে তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নাটোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ শরীফ উদ্দীন এ আদেশ দেন।এ দিন হত্যা ও বিস্ফোরকসহ দুটি মামলার চার্জ শুনানির দিন ছিল।এর মধ্যে ২০১২ সালে যুবলীগ কর্মী পলাশ হত্যা মামলায় দুলু এবং ২০১৭ সালের একটি বিস্ফোরক মামলায় দুলুর স্ত্রী ছবি চার্জ শুনানির নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির না হওয়ায় আইনজীবীরা সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক ওই আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের দুজনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে চার্জ গঠন করেন।
নাটোর জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান জানান, ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে যুবলীগ কর্মী পলাশ নাটোর স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে শহরের আলাইপুর এলাকায় বিএনপি নেতা দুলুর বাসভবনের সামনে দুলুর উপস্থিতিতে ১৫/১৬ জন অস্ত্রধারী পলাশকে গুলি করে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পলাশকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্তুজা আলী বালু বাদী হয়ে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুলুসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।অপরদিকে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে দুলুর বাড়ি অতিক্রম করার সময় বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা মিছিল লক্ষ্য করে ককটেল ও গুলি ছোড়েন।এ ঘটনায় তৎকালীন সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রুবেল গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম বাদী হয়ে দুলুর স্ত্রী ছবিসহ ২৫ জনের নামে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ ২৫ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দেয়।পিপি আরিফুর রহমান আরও জানান, এ মামলাটি খারিজের পিটিশন দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়। ফলে কয়েক বছর মামলাগুলো অচলাবস্থায় ছিল। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর মামলাগুলো পর্যালোচনা করেন এবং আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হন। আদালত তার কথা শুনেছেন এবং আসামিপক্ষের ২৬৫/সি এর দরখাস্তটি না মঞ্জুর করেন।
যেহেতু দুলু দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত, তাই বিচারক তার পিটিশন ও সময় আবেদন না মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন। পাশাপাশি ৩০২ ধারায় সব আসামির নামে চার্জ গঠন হয়েছে। একই সঙ্গে অপর একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিস্ফোরক মামলায় মঙ্গলবার নির্ধারিত চার্জ গঠনের দিনে দুলুর স্ত্রী ছবি আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার নামেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।
এদিকে দুলুর আইনজীবী আবুল হোসেন বলেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। তিনি বর্তমানে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে কেমো নিচ্ছেন মর্মে আদালতে চিকিৎসা সনদ এবং স্বামীর সেবারত তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির সময় আবেদন চেয়ে আদালতে দরখাস্ত দাখিল করা হয়। কিন্ত বিচারক ওই আবেদন না মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মালেক বলেন, বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ছিলেন সন্ত্রাসীদের গড ফাদার। তার নামে ১১টি মামলা রয়েছে।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, মঙ্গলবার রাজশাহীতে কৃষকদলের সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল নাটোরের প্রিয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর। কিন্তু চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি সমাবেশে আসতে পারেননি, আদালতেও আসতে পারেননি। অথচ তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমরা নাটোর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এ ফরমায়েসি আদেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।