বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পাওয়ায় এবার হার্ডলাইনে যাচ্ছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যুতে গতকাল রোববার বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সময়সীমা বেঁধে দেন। সে হিসাবে আলটিমেটামের সময় শেষ হবে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার যদি সাড়া না দেয় তাহলে কী করবে বিএনপি? পরবর্তী কর্মসূচিইবা কী হবে? এ ইস্যুতে দলটির এক দফার চলমান যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি নতুন মোড় নেবে কি?বিষয়টি নিয়ে কথা বলে প্রায় একই বক্তব্য পাওয়া গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। তারা বলছেন, বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে দাবি মানা না হলে কর্মসূচি নতুন মোড় নেবে। দাবি আদায়ে যে কর্মসূচি দেওয়া দরকার তা-ই দেওয়া হবে।গতকাল রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, অনেক অনেক বেশি অসুস্থ। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। বাংলাদেশে আর তার চিকিৎসা নেই। তাকে বিদেশে না নেওয়া গেলে বাঁচানো দুষ্কর হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে দেশনেত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে আলটিমেটামের সময় পার হওয়ার পর বিএনপি পরে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে মির্জা ফখরুল সে বিষয়ে কিছু বলেননি।সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে এক ধরনের আলোচনা হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক। এটিকে আরও ফলপ্রসূ করার কৌশল হিসেবেই ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপি।
ওইদিন একই সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। পরে তিনি খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা বিষয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে।৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের পর সরকার দাবি না মানলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আলাল জাগো নিউজকে বলেন, সেক্ষেত্রে কী হবে সেটা যথাসময়ে মহাসচিব বলবেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহাসচিব একা দেখা করেছেন। সেখানে বিএনপির আমরা অন্য কেউ ছিলাম না। এ আলটিমেটাম খুবই বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের সাড়া পাওয়া না গেলে দলের মহাসচিব পরবর্তী কর্মসূচি দেবেন।কর্মসূচি নতুন মোড় নিচ্ছে কি না- এ প্রশ্নে আলাল বলেন, কর্মসূচি তো নতুন মোড় নিতে বাধ্য। গোটা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রত্যাশা ও দেশের জনগণের প্রত্যাশা যখন গোয়ার্তুমির মাধ্যমে সরকার প্রত্যাখ্যান করছে, তখন কর্মসূচিতেও সঙ্গত কারণেই বড় ধরনের মোড় নেবে। তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে সেই মোড় হয়তো একটু আগেই নিচ্ছে।এ বিষয়ে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আলটিমেটামের ঘোষণা এসেছে। এখন পার্টি বসে ডিসিশন (পরবর্তী কর্মসূচি বিষয়ে) নেবে। এতদিন তো সরকার কোনো কথাই কানে তোলেনি। আমরা মনে করি সরকার অন্যায় করেছে। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করার কথা বলা হয়েছে। অথচ আমরা একাধিকবার সেটা করেছি।
এক দফার যুগপৎ আন্দোলন নতুন মোড় নিচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশই তো নতুন মোড় নিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরো বিশ্বই এখন নতুন মোড় নিচ্ছে। প্রতিনিয়ত প্রধানমন্ত্রী সেটা নিজে বুঝতে পারছেন এবং তিনি প্রকাশও করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির মীমাংসা কীভাবে হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে এবার ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মত অবস্থায় নেই দেশ। তবে নতুন কর্মসূচির ধরন কী হবে, এ নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।রোববারের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমলারা মিটিং করে বেড়াচ্ছেন, যে কোনো মূল্যে গুম-খুন করে হলেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে যতটা মরিয়া, আওয়ামী লীগও ততটা নয়।
ওই সমাবেশে আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশে চিকিৎসা করতে পারলে খালেদা জিয়ার কেন তা পারবেন না? আদালতের বিচারকদের একদিন এর হিসাব দিতে হবে। আদালতও খালেদা জিয়ার সঙ্গে ন্যায়বিচার করছেন না। সম্পূর্ণ নির্দয় ব্যবহার করছেন।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়াকে এ সরকার ভয় পায়। কারণ তিনি গণতন্ত্রের কথা বলেন। তাই তাকে ধ্বংস করে আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়।
আলটিমেটাম বিষয়ে ওই সমাবেশে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিশ্বে কিছু ফ্যাসিস্ট সরকার আছে, যারা দখলদারির মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। তাদের ওপরই স্যাংশনস আসে। বাংলাদেশও এখন তেমন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগকে একদিন বাংলাদেশের জনগণের মুখোমুখি হতেই হবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে আমার কাছে কোনো আবেদন আসেনি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাইতে পারবে।তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা আছে। সরকার যদি মানবিক ও আন্তরিক হয় সেক্ষেত্রে পারমিশন দিতে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া এ বিষয়ে নতুন করে আবেদন চাওয়া হলে বিএনপি সেটিও করতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।