কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে। আইনটি বাতিলের দাবিতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে দেশে। ১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। আইনটির পুনর্বিবেচনা চেয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইনটিতে কিছু পরিবর্তন আনার কথা চিন্তা করছে সরকার।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, এই আইনে কোনো অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যাবে না-এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
২০১৮ সালে প্রণয়নের শুরু থেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে সমালোচনা চলে আসছে। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে প্রায় সব মহলই এ আইনটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তবে সরকার এসব আপত্তি আমলে নেয়নি। এই আইনে ৯ মাস ধরে আটক থাকা লেখক মুশতাক আহমেদ গত বৃহস্পতিবার কারাগারে মারা যান।
ছয় বার তার জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তদন্তের আগে মামলা নেয়া বা কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, এমন ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি যে, সরাসরি মামলা নেয়া হবে না। কোন অভিযোগ এলে পুলিশ প্রথমে তদন্ত করে দেখবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তারপরে মামলা নেয়া হবে। কিন্তু আইনটি প্রণয়নের পর থেকে কোন অভিযোগ এলেই পুলিশ মামলা নিয়ে সাথে সাথেই অভিযুক্তকে আটক করছে- এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আগে যাতে আটক না করে এবং তদন্তের জন্য যেন অপেক্ষা করে- সেই জায়গায় আসার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, সব আইনই যখন করা হয়, তখন কিন্তু একটা ট্রায়াল এন্ড এর বা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। কথা হচ্ছে, এখানে যদি কিছু অ্যাবিউজ এবং মিসইউজ হয়, সেটা কি করে বন্ধ করা হবে- সে ব্যাপারে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
মন্ত্রী আনিসুল হক বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সাথেও আলোচনা করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অফিসের সাথে আমি আলাপ চালাচ্ছি। সারা বিশ্বের সাথে আমরা এটার তুলনা করছি। মিসইউজ যেগুলি ধরা পড়ছে বা অ্যাবিউজ যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর জন্য একটা চেক অ্যাণ্ড ব্যালেন্স সিস্টেম কীভাবে ডেভেলপ করা যায়, এই আইনের মধ্যেই কীভাবে সেটা থাকতে পারে-সেই ব্যবস্থা আমরা করছি," বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি মনে করেন, এসব ব্যবস্থা নিতে আইনের সংশোধনের প্রয়োজন নাও হতে পারে এবং বিধির মাধ্যমে সেটা করা যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এই আইনের কারণে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা খর্ব করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।