মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেলফি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন তার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই সেলফি গলায় বেঁধে ঝুলিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।মির্জা ফখরুল বলেন, এই জাতির দুর্ভাগ্য কোথায় জানেন? বেসিক জায়গায় আমরা কেউ যাই না। আমরা সেলফির মতো ইস্যুতে যাই। ওবায়দুল কাদের সাহেব নাকি বলেছেন ফখরুল এখন কী বলবেন। আমি বলি আমার পরামর্শটা নেবেন। এই ছবিটা বাঁধিয়ে গলায় দিয়ে ঘুরে বেড়ান। ওটা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, বোঝানোর চেষ্টা করেন জনগণকে যে বাইডেন এখন আমার সঙ্গে আছে। অথচ আপনার এই প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে কী বললেন, তিনি বললেন, যে আমেরিকা এখন বলছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নাকি তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য, যেহেতু সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিচ্ছে না সে জন্য আমেরিকা নাকি তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তাহলে এখন কি বুঝবো আমরা আপনি সেন্টমার্টিন দ্বীপটা দিয়ে দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, কয়দিন আগে আবার উনি আরেকটা কথা বলেছেন, এই এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকা চায় সেখানে বেস করবে এবং গোটা এই এলাকায় সেই প্রভুত্ব করবে, দেশগুলো দখল করবে, আক্রমণ করবে, এভাবে কথা বলেছেন। এটা আমেরিকা, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ নয়।
ফখরুল বলেন, র্যাবের ওপর থেকে স্যাংশনস (নিষেধাজ্ঞা) উঠে যায়নি সেলফির জন্য। ভিসানীতির পরিবর্তন হয়নি। তার জন্য নতুন ডেমোক্রেসি কনভেনশন ডেকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সুতরাং ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। কথাগুলো আপনারা বলেন কিন্তু ভেবেচিন্তে বলেন না।মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এত দেউলিয়া এত নিঃস্ব হয়ে গেছে যে বাইডেনের সঙ্গে একটা সেলফি তুলে এখন আপনি ঢোল পেটাচ্ছেন যে হ্যাঁ আমরা জিতে গেছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জেতাবে তো বাংলাদেশের মানুষ। ভোটের মাধ্যমে, সেই ভোটটা ঠিকমতো হওয়ার ব্যবস্থা করেন। তা না হলে কোনো বাইডেন-ই আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না। সেলফি রক্ষা করতে পারবে না।
তিনি বলেন, পরিষ্কার কথা, ভারতে গিয়ে যে ধরনের কথাবার্তা বলছেন যেখানে যান যত ছবি দেখাতে চান কিন্তু যদি জনগণ নিজের ভোটটা নিজেরা দিতে না পারে তাহলে জনগণ কখনো আপনাদের ক্ষমা করবে না। আপনারা ক্ষমতায় ঠিক থাকতে পারবেন না, খুব পরিষ্কার কথা। বাইরের বা আমেরিকা তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি খুব পরিষ্কার করে বলেছে, আমরা বাংলাদেশের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। তারা বলেছে আমরা এখানে সব দলের অংশগ্রহণে একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চাই যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এটা শুধু আমেরিকান নয় সমস্ত গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলছে।মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আমাদের জনগণের মতামতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই সেই জনগণ পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে যথেষ্ট হয়েছে, অনেক লুট করেছে, অনেক নির্যাতন করেছে নিপীড়ন করেছে। অনেক ধ্বংস করেছে, মানুষকে হত্যা করেছে, খালেদা জিয়াকে বিনাদোষে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তারেক রহমানকে সাধারণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। সুতরাং অনেক হয়ে গেছে, দয়া করে এখন বিদায় হও তা না হলে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। তারা বলছে সংসদ বিলুপ্ত করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে দিন।সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এত ভয় কেন, কেয়ারটেকার সরকারের নির্বাচন করতে এত ভয় কেন, আমরাও তো দিয়েছি, ম্যাডাম তো দিয়ে দিয়েছিলেন কারণ আপনারা জানেন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় দশটা আসনে পাবেন না। পরিষ্কার করে বলছি আমি এই দেশের মানুষ এখন আপনাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসির রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ বক্তৃতা করেন।