আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর অধীনে হবে তাহলে তারা স্বপ্নের ঘোরে আছে। রাস্তায় যান তাহলে বুঝতে পারবেন। মানুষ ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে না। বলে এ সরকার যাচ্ছে তো। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খা হলে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন উপলক্ষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শহিদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দুদু বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনন্য কৃতির মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এই দল তিনি এমন আদর্শিক ভাবে তৈরি করেছেন যে মানুষের হৃদয়ে গেথে গেছে। মানুষ তার হৃদয়ের স্থান দিয়েছে। এই দলকে মানুষ ভালোবাসে বলেই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে ভয় পায়।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এমন একজন বরপুত্র যে সময় তাকে নিয়ে এসেছে। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও আওয়ামী লীগের অনেক বড়-বড় নেতা ছিল। কিন্তু কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে সাহস করেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করলেন, ‘আমি মেজর জিয়া বলছি, স্বাধীনতার ঘোষণা করছি।’ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, যুদ্ধ করেছেন, আবার ফিরে এসে চাকরিতে জয়েন্ট করেছে কোনো রাজনীতির দলের সাথে যায়নি। তিনি রাজনীতির লোক না। কিন্তু তিনি যখন রাজনীতিতে আসলেন তখন গণভোটের ব্যবস্থা করলেন। যা বর্তমান সরকার উঠিয়ে দিয়েছে। অনেকেই তাকে ইসলামী নেতা মনে করেন। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধের নেতা। তার সময় সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে ভালো ছিল। তার ভালোবাসা সকল ধর্মের লোকদের প্রতি ছিল। বাংলাদেশ যা কিছুর উপর দাঁড়িয়ে আছে অর্থনীতি, শিক্ষা সবকিছু শহীদ জিয়ার হাতে গড়া। ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির দ্বিতীয় পিলার। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যদি কেউ নোবেল পায় সেটা বেগম খালেদা জিয়া পাওয়ার যোগ্য। কথাটি এই কারণে বলছি যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। তার (বেগম খালেদা জিয়া) যখন স্বামী যুদ্ধে গেলেন তাকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে রাখা হলো। তখন তো অনেকেই ঘরে বসে ছিল। কেউ কেউ পাকিস্তানি মেজরের গাড়িতে করে হসপিটালে গিয়েছে ভাতা নিয়েছে। কিন্তু তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তার স্বামীকে হত্যা করার পরে তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তার প্রতি একটু শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তাকে এভাবে মিথ্যা মামলায় জেলে আটক করে রাখত না। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছিলেন। জনগণ কেয়ারটেকার চেয়েছিল বলে তিনি কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অনেকেই বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জাদুঘরে রাখা হয়েছে। আমি বলি যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে তাদেরকে জাদুঘরে রাখা উচিত। আর লিখে দিবেন এরা এক সময় আন্দোলন করেছিল আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে এরাই জাদুঘরে থাকার যোগ্য। বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্যই ডিজিটাল আইন করা হয়েছে মন্তব্য করে কৃষকদলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, ‘বিএনপি সত্য কথা বলে, মানুষের পাশে দাঁড়ায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা মানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা কেস করে। আর এইগুলো বলা থেকে বিরত রাখতে, মুখ বন্ধ রাখতে ডিজিটাল আইন করা হয়েছে। তবে ডিজিটাল আইন করে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার জন্য মানুষের অধিকারের জন্য। এই জায়গায় কোন আপস নাই। এটাই শহীদ জিয়া বেগম জিয়া রাজনীতি। আর একজন আছেন যিনি আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। তার নাম শুনলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি জায়গায় নিয়ে এসেছেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।