নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি করা ভোটকেন্দ্রগুলোকে ডাটাবেজ আকারে সংরক্ষণ করা হবে। এই ভোটকেন্দ্রের ডাটাবেজ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। ইসি আলমগীর বলেন, এবার ভোটকেন্দ্রের একটা ডাটাবেজ করা হবে। কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও এগুলো ব্যবহার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় আবার চূড়ান্ত করা হবে। কারণ, অনেক কেন্দ্র পরিবর্তন করতে হবে। প্রাকৃতিক কিংবা অন্য কারণে কেন্দ্র করার অনুপযোগী হতে পারে। তবে নতুন ভবন হলে বা পাশে নতুন একটি কলেজ হলে কিংবা প্রাকৃতিক কারণে অনুপযোগী হলে নতুন করে কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। কাজেই ডাটাবেজ থেকে কোনটা ব্যবহার করব, কোনটা করব না, তা নির্বাচন এলে চূড়ান্ত করা হবে। নির্ভুল ভোটার তালিকা দেওয়ার জন্য কেন বলা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর কারণ ত্রুটি থাকতে পারে। বাবার নামে আকারে ভুল, আবার মায়ের নামে হ পড়ে নাই, এমন হতে পারে। এ সমস্ত আবেদন যেগুলো আছে, অর্থাৎ নিজ উদ্যোগে নয়, যেগুলো আবেদন আছে যেমন- ঠিকানা পরিবর্তন, জন্ম তারিখ সংশোধন, পোস্ট কোড ভুল ইত্যাদি আবেদন ঠিক করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রতিদিন ভোটার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকবে। তিনি আরও জানান, যখন তফসিল দেবো তখন আমরা ঘোষণা দেবো- এই তারিখের পরে যারা ভোটার হবে তারা এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কারণ, কয়েক ধাপে ওখানে আবেদন যাচাই করা হয়। তবে এখন শুনছি যে কোনো কোনো রোহিঙ্গা অন্য এলাকায় চলে গিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে, আর আপনারা বিষয়টি দেখবেন। ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুতের বিষয়ে তিনি বলেন, আইনে বলা আছে- নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রণয়ন করবে। যখন তফসিল ঘোষণা হবে তখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তালিকা দেবে। এখন কাকে দিয়ে তালিকা করাবে সেটা কমিশনের ব্যাপার। এত দিন ট্রেডিশনালি যেটা হয়ে আসছিল- ভোটকেন্দ্রের তালিকা, অতীতের তালিকা ফলো করে কিছু যোগ বিয়োগ করা হতো। এটার একটা নীতিমালা আছে যে কোথায় ভোটকেন্দ্র করা যাবে, কোথায় করা যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী এটা এক সময় জেলা প্রশাসক করতো, আমরা যখন চাকরি করতাম। এরপর যখন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেওয়া হলো তখন উনার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক করতেন। এরপর উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তা থাকায় তাদের দিয়ে করা হতো। তিনি আরও বলেন, এখন আমরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলি, তখন তারা কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলেছিলেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক দূরে যেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু কাছাকাছি ভোটকেন্দ্র করলে অনেক কেন্দ্র হয়। সে অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই ভোটকেন্দ্র কমিয়ে যদি বুথের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাহলে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো যাবে। ইসি আলমগীর বলেন, দুই নম্বর বিষয় হলো আমাদের কর্মকর্তা থাকলে ভালো হবে, এটা আমরা মনে করি না। ভালো হতে পারে, মন্দও হতে পারে। আমরা বিবেচনা করে দেখলাম স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) আরো আছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজটা করলে আরো ভালো হবে। তখন আমরা শিক্ষা বিভাগকে নিলাম, কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের। কাজেই সবাইকে নিয়ে কমিটি করলে একক কোনো ব্যক্তির প্রভাব থাকবে না। আমরা ভোটকেন্দ্র করার সময় অভিযোগ পাই। একজন কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দেওয়া থাকলে অনেকেই সেখানে প্রভাব বিস্তাব করে। তারা চাপের মুখে থাকে। এই চাপ অতিক্রম করা কঠিন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাপ যেন না হয় সেজন্য আমরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পুলিশ, শিক্ষা ও আমাদের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি করেছি। এতে একক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এছাড়া এতোগুলো কর্মকর্তার ওপর চাপ প্রয়োগ করাও সম্ভব হবে না। আবার তারা তালিকা করার পর অভিযোগ আসলে তা শুনানির পর চূড়ান্ত হবে।