ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর:বিচারক অসুস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-08-21, 12.00 AM
গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর:বিচারক অসুস্থ

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। সেদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে চালানো হয় অতর্কিত গ্রেনেড হামলা। সেখানে মারা যান আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে পড়ে ওই হামলায়। আজ সেই নৃশংসতার ১৯ বছর। হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা করে। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরক আইনে। ২০০৮ সালের ১১ জুন মামলা দুটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয় পুলিশ।দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ‘ডাবল’ মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আরও ১১ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানসহ ১৪ জন পলাতক এবং কারাগারে ২৭ জন। আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন ৯ জন।বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায়ের পর হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। আপিলের পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা এবং করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক বছর মামলাটি উচ্চ আদালতে ছিল শুনানির অপেক্ষায়। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর এর অবসান ঘটে। সেদিন এ মামলায় আসামিদের করা আপিল আবেদন ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানির শুরু হয়। তবে একজন বিচারক অসুস্থ থাকায় আপাতত মামলার কার্যক্রম বন্ধ। তিনি সুস্থ হওয়ার পর মামলাটির শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

গ্রেনেড হামলা মামলার আপিলের শুনানি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেন, মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে যে আপিলগুলো ফাইল করা হয় সেগুলো শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করেন। এ মামলায় প্রধান বিচারপতি একটি বেঞ্চ ঠিক করেছেন। সেখানে শুনানি শুরু হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি অসুস্থ। তিনি অসুস্থ থাকার কারণে কোর্ট বসছে না। আশা করা যাচ্ছে বন্ধের পর তারা বসবেন। বসলে আমরা তখন শুনানি শেষ করবো। কোর্টে শুনানি শুরু হলে যারা মৃত্যুদণ্ডের আসামি, যাদের ফাঁসির দণ্ডের রায় হয়েছিল, তাদের পক্ষে আইনজীবীরা বক্তব্য তুলে ধরবেন। পরবর্তীসময়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য (যুক্তিতর্ক) তুলে ধরবো। সময় বেশি লাগবে না।মামলায় আপিল আবেদনটি যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে সামনের শুনানিতে আরও ১০ থেকে ১২ কার্যদিবস লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাএ পর্যায়ে কোন মাসের কথা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হলো আদালতে বিচারপতিরা যেদিন বসবেন। সেদিন থেকে আমরা আশা করছি যে ১০-১২ দিনে শেষ হয়ে যাবে, ইন্শাআল্লাহ্। সামনে অবকাশ আছে। যদি অবকাশের আগেই শুনানি করা যেতে পারে, সম্ভবত আগেই শেষ হয়ে যেতে পারে।জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এটি এখন উচ্চ আদালতে। চলতি বছর, খুব কাছাকাছি সময়ে এ মামলার আপিল শুনানি শেষ হতে পারে। এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা হয়েছে।

 

রাষ্ট্রপক্ষ চায় সব আসামির দণ্ড বহাল থাকুক

 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারিক আদালত আসামিদের যে দণ্ড দিয়েছেন, তা সব যেন বহাল থাকে। মামলাটি দেখে আইনগত বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। দণ্ড যাতে বহাল রাখা হয়, সেজন্য আর্গুমেন্ট করবো।রাষ্ট্রপক্ষের আর্জি কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে এটা পড়ার প্রস্তুতি নিয়েছি, আমাদের প্রার্থনা থাকবে যে, বিচারিক আদালত (নিম্ন) অত্যন্ত সুলিখিত কারণ দেখিয়ে রায় দিয়েছেন। আমরা আশা রাখবো, মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায়ের শাস্তিটা বহাল থাকবে।

মামলার প্রক্রিয়া

 

২০১৮ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। সে ফাঁসির সাজা নিশ্চিত করতে ও আসামিদের করা আপিল শুনানি করা হচ্ছে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন।

 

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবে আসামি পক্ষ। আসামিদের ফাঁসি বহাল থাকলে তারা রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবেন। রিভিউতেও দণ্ড বহাল থাকলে অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন। তার পরে শুরু হবে রায়ের দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।