বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকরা। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন-ভাতা সমন্বয়ের দাবি দীর্ঘদিনের। সরকারের পক্ষ থেকে সুনজর না পাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। টানা ১২দিন ধরে সড়কে শিক্ষকরা। আন্দোলন থেকে সরাতে অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বাধারও। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বৈঠক শেষে বলেছেন, নির্বাচনের আগে জাতীয়করণ সম্ভব নয়। শিক্ষকরা বলছেন, ঢাকা এসে খালি হাতে ফিরবেন না তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পাঁচ মিনিটের সাক্ষাৎ চান তারা। প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করলে ঘরে ফিরবেন।
এদিকে আন্দোলনে থাকা এক শিক্ষক নিজ এলাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা অবস্থানের অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কর্মসূচি শুরু করেন তারা। পল্টন মোড় থেকে হাইকোর্ট অভিমুখী রাস্তার একপাশ বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় শিক্ষকরা তাদের বক্তব্যে বার বার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ মিনিটের সাক্ষাতে তিনি যে আশ্বাস দেবেন, তা নিয়েই ঘরে ফিরবেন তারা।
এদিকে জাতীয়করণের আন্দোলনে অংশ নেয়া অহিদ আহম্মেদ নামে এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এ কে জি ছায়দুল হক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জানা যায়, ১৪ই জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। অসুস্থবোধ করায় গত শুক্রবার তিনি বাড়িতে যান। শুক্রবার রাতেই মৃত্যু হয় তার।
আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ অবস্থান কর্মসূচিতে মোবাইলে একটি ছবি ও ফেসবুক পোস্ট দেখিয়ে বলেন, বিটিএ নোয়াখালী কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ফেসবুক পেজের পোস্ট অনুযায়ী, নিহতের নাম অহিদ আহম্মদ। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এ কে জি ছায়েদুল হক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আন্দোলনে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ি যাওয়ার পর গতরাতে ইন্তেকাল করেন। শিক্ষকদের জাতীয়করণের আন্দোলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিটিএ’র ব্যানারে। সংগঠনের ব্যানারে এই আন্দোলন চলমান থাকলেও এতে যোগ দিয়েছেন বিপুল পরিমাণ সাধারণ শিক্ষক। এ ছাড়াও আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে আরও ১০টি শিক্ষক সংগঠন। গতকাল অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে বিটিএ সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কাওছার আহমেদ বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের শিক্ষকরা ঢাকা এসে এভাবে খালি হাতে ফিরে যেতে পারেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্তত পাঁচটা মিনিট সাক্ষাৎ করতে চাই। উনি আমাদের আশ্বস্ত করলে আমরা ফিরে যাবো। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী আমাদের স্পষ্ট কোনো আশ্বাস বা দিক-নির্দেশনা দিতে পারেননি।
বিটিএ’র সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া বলেন, জাতীয়করণ নিয়ে বৈঠকে আমাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করেননি। তিনি শুধু তার কথা বলে গেছেন। আমাদের দাবি বৈষম্যের শিকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দিকে নজর দিতে হবে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ চাই, আশ্বস্ত হতে চাই। উনি আমাদের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিলে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করে ঘরে ফিরে যাবো।