ঢাকা, শনিবার ৪ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

উত্তরার থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-07-19, 12.00 AM
উত্তরার থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা

সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলন ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথম কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বুধবার উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছে বিএনপি। এই পদযাত্রাটি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত এরপর ব্রিজ থেকে মহানগর দক্ষিনের উদ্যোগে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাবে।বিএনপির কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের হামলার সমচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় পদযাত্রা শুরুর আগে আবদুল্লাহপুরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তার এই বক্তব্য আসে। এই সময়ে মির্জা আব্বাস শ্লোগান ধরেন, ‘এক দফা এক দাবি’। নেতা-কর্মীরা এই সমস্বরে জবাব দেয়.. ‘হাসিনা তুই কবে যাবি’।মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে আমরা মিছিল-মিটিং করব আর আপনারা বাংলা কলেজ(গতকালের পদযাত্রায় মিরপুরের বাংলা কলেজে থেকে ছাত্রলীগের ইটপাটকেল নিক্ষেপ) থেকে ইট মারবেন, পাথর মারবেন আর আমরা ছেড়ে দেবোৃ এটা তো হবে না।’’

 

‘‘ ছেড়ে দেয়ার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। আমাদের অধিকারকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। গতকাল সারা দেশে আপনারা(ক্ষমতাসীনরা) যে অত্যাচার করেছে আমাদের ওপরে সেই অত্যাচারের সমচিত জবাব আমরা দেবো ইনশাল্লাহ।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের জনগন ভোটের অধিকার আদায় করে নেবে। ১৫ বছর আপনাদের অত্যাচার আমরা সইয়েছি, এই অত্যাচার আর আমরা সইব না।”

 

‘‘ আমরা দেশের জনগন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে, মিছিল করতে শিখেছেৃ আ্পনাদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারবো না। আমরা অত্যাচারের জবাব দেবে।”

 

‘শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি সৃষ্টি’

 

মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ গতকাল লক্ষীপুরে আমাদের লোক মেরেছেন, আপনারা শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছেন। আমাদের মিটিংয়ে আমাদের মিছিলে কোনো রকম গোলোযোগ হয় না। আপনারা গোলযোগ তৈরি করতে চান। কেনো?”

 

‘‘ আমরা যেদিন মিছিল-মিটিং করি, আপনারা সেদিন দিয়েন না। আপনারা যেদিন করবেন, আমরা দেবো না। আর তা না করে গোলোযোগ করাবেন.. এটা আর সহ্য করা হবে না।”

 

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় উত্তরার আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করেছে, বিমান বন্দর সড়ক দিয়ে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে বিএনপির পদযাত্রা যাত্রাবাড়ী পৌঁছাবে বিকাল ৪টায়।

 

যাত্রাপথ: আবদুল্লাহপুর- বিমানবন্দর-কুড়িল বিশ্বরোড- নতুন বাজার- বাড্ডা- রামপুরা ব্রিজ- আবুল হোটেল- খিলগাঁও- বাসাবো- মুগদাপাড়া- সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা।

 

রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী এই পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে এই পদযাত্রা রামপুরায় গিয়ে দক্ষিন বিএনপির কাছে হস্তান্তর করবে সেখান থেকে দক্ষিন বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রাটি যাত্রাবাড়ি গিয়ে শেষে হবে বলে মহানগর নেতারা জানান।

 

উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবেদনী ফারুক, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

 

গত ১৩ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে  সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনের যে ঘোষণা দেন তার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে মঙ্গলবার সারাদেশে মহানগর ও জেলায় এই পদযাত্রা কর্মসূচি হয়। রাজধানীতে প্রথমদিন গাবতলী থেকে পুরনো ঢাকার রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত পদযাত্রা হয়।

 

‘উত্তরা উপশহরে দীর্ঘ পদযাত্রা’

 

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘‘ বিশাল রাস্তা উপরে রোদ্র নিচে উত্তপ্ত রাজপথ আর আওয়ামী লীগের অত্যাচার এই তিনটা বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, এই তিনটি বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, এই তিনটা বাধা অতিক্রম করে আমাদের তারেক রহমানকে ফিরে আনতে হবে।”

 

‘‘ আমাদের কথা বলার অধিকার আদায় করতে হবে, আমাদের ভোটের অধিকার আদায় করতে হবে। এই বাংলাদেশ কারো করদ রাজ্য নয়, এই বাংলাদেশ এদেশের মানুষের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে।”

 

‘কাটাছেড়া নয়, অখন্ড সংবিধানে নির্বাচন হতে হবে’

 

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ আমি দেখলাম, কাদের সাহেব(ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, সংবিধানের বাইরে আপনারা একচুল সরবেন না।খুব ভালো কথা কাদের সাহেব। আপনার কথায় আপনি স্থির থাকেন।”

 

‘‘ আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা যাবো না। সবার লক্ষ্য সংবিধান। খায়রুল হকের(এবিএম খায়রুল হক) সংবিধান না বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা চাই অখন্ড সংবিধান। যে সংবিধানে কাটা ছাড়া করা হয় নাই। যে সংবিধান থেকে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে ওই সংবিধান আমরাও চাই না। আমরা চাই সেই সংবিধান যে সংবিধানে কাটাকাটি ছিলো, অপারেশন ছিলো না, পোস্টমার্টাম ছিলো সেই সংবিধান বাংলাদেশের জনগন তৈরি করেছিলো সেই সংবিধান আমরা চাই।”

 

ঢাকা ছাড়া বুধবার দিনাজপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চট্টগ্রাম মহানগরে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।

 

বিএনপির পাশপাশি সমমনা জোটগুলোর মধ্যে সকাল ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এবং ১২ দলীয় জোট কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছে।

 

বিকালে তিনটায় জাতীয়তাবাদী সমমনা দল কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এবং লেবার পার্টি পুরানা পল্টন থেকে মানিকনগর পর্যন্ত, এলডিপি এফডিসির কাছে থেকে, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আরামবাগের কাছ থেকে পদযাত্রা করবে।

 

একদফায়র ঘোষণায় রয়েছে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান অবৈধ সংসদ বিলুপ্ত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধিনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েসি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা।বিএনপির এই পথযাত্রাকে ঘিরে ২০ কিলো মিটার সড়ক পথের বিভিন্ন পথে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।