ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

বাকেরগঞ্জে ভেঙেছে উপহারের ঘর

জেলা প্রতিনিধি।। দৈনিক সমবাংলা

2023-07-14, 12.00 AM
বাকেরগঞ্জে ভেঙেছে উপহারের ঘর

বরিশালের বাকেরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর হস্তান্তরের আগেই ভেঙে পড়ছে। ঘরগুলো নির্মাণের শুরু থেকেই কাজে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে কাজে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হতেই পারে, হস্তান্তরের আগে ঠিক করে দেওয়া হবে।বুধবার (১২ জুলাই) সকালে বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের দাওকাঠিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘর হস্তান্তরের আগেই পলেস্তারা খসে পড়ছে, দরজা-জানালায় ব্যবহৃত কাঠ ও লোহার রড ভেঙে পড়ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা।তারা জানান, এখানে ৩৯টি ঘরের মধ্যে ৩০টি ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। কয়েকটি ঘরের দরজার সামনের অংশ ও পিলারের পলেস্তারা উঠে গিয়ে ভেতরের রড বের হয়ে গেছে। শৌচাগারের রিং ভেঙে গেছে।

 

রহিম নামে এক উপকারভোগী বলেন, রাজমিস্ত্রিরা এমনভাবে কাজগুলো করেছেন যে দরজা-জানালা ঠিকভাবে লাগানো যায় না। জোর করে চাপ দিয়ে লাগাতে হয়। আবার জোরে চাপ দিলে দেখি খুলে আসার উপক্রম হয়।

 

আরেক উপকারভোগী নাজমা বলেন, দরজা-জানালা ধরলেই পড়ে যায়। এখনো হস্তান্তর করেনি তাতেই এই অবস্থা, এ অবস্থায় কতদিন টিকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, ঘরগুলোতে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় স্থানীয়রা বাধা দিয়েছিল। ওই সময় তাদের বিরুদ্ধে মামলার ভয় দেখানো হয়। এমনকি স্থানীয়রা যেন ঘর নির্মাণ কাজের ধারেকাছে না যায় সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।

 

বাকেরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুদ আকন জানান, আগের ঘরগুলোর চেয়ে চতুর্থ ধাপের ঘরের কাজ নিম্নমানের হয়েছে। সব জায়গায় নিয়ম মেনে ঘরের পিলার বানানো হয়নি।

 

ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে অভিযোগ তুলে তিনি আরও জানান, পুরো কাজের তদারকি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি নিজস্ব ঠিকাদার ও জনবল দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। স্থানীয় কাউকে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে দেননি।

 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাঠালিয়াতে ১৯টি, নিয়ামতিতে ৪৬টি, কলসাকাঠিতে ২৭টি, ফরিদপুরে ৪২টি, চরামদ্দির কাঁটাদিয়ায় ৫৯টি ও চরাদিতে ৪৫টি ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ।

 

এসব ঘর নির্মাণেও নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। তারা জানান, সব ইউনিয়নের ঘরগুলোর পরিণতি একই।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান, উপজেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ঘর নির্মাণ করলে কাজের মান খারাপ হলেও আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না। এছাড়া তিনি এই ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনাও করেননি। স্থানীয়রা অভিযোগ করলে তাদের মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ এলাকায় না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চতুর্থ ধাপে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ২৭৭টি ঘর নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৮৮ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীলের তত্ত্বাবধানে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় চলতি বছরের শুরুতে। বর্তমানে বেশিরভাগ ঘরের নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। এরই মধ্যে উপকারভোগীদের মাঝে ঘরের দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন ঘর হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, একটা কনস্ট্রাকশন কাজের সঙ্গে অনেক লোক জড়িত থাকে। সেক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকাটা স্বাভাবিক। তাছাড়া ঝড়-বন্যা হয়েছে, তাতেও কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ঘরগুলো হস্তান্তরের আগে ত্রুটিগুলো সংস্কার করে দেওয়া হবে।