যুগপৎ আন্দোলনের একদফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা লক্ষ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। সমাবেশ চলার সময়ও চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ সমাবেশে বসে নেতাদের বক্তব্য শুনছেন। নয়াপল্টনসহ আশপােশর অলি-গলিতে শুধু মানুষ আর মানুষ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের জন্য কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ছয়টি ট্রাক দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে।
বিএনপির সমাবেশস্থল নয়াপল্টন হলেও ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত লোকেলোরণ্য। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সরেজমিনে শান্তিনগর, মতিঝিল, পুরানোপল্টন, বিজয় নগর, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে শুধু ঢাকা নয় আশপাশের জেলা থেকেও যোগ দিয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। গাজীপুর জেলা, মহানগর, নারায়নগঞ্জ জেলা ও মহানগর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে মিছিল নিয়ে হাজারো নেতা-কর্মী যোগ দেন সমাবেশে। গাজীপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে কর্ণফুলি গার্ডেন সিটির সামনে অবস্থান নিতে থাকে। পরে জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হান্নান, কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির, ডা. রফিুকুল ইসলাম বাচ্চু, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, আব্দুল মতিন, খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা, হুমায়ুন কবির মাস্টার, শাহজাহান ফকির, আকতারুল আলম মাস্টার, রাশেদুল হক, আতাউর মোল্লার নেতৃত্বে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। তারা ঢাকা ব্যাংকের বিপরীতে অবস্থান নেন। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, এম মঞ্জুরুল করিম রনি, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলমরে নেতৃত্বে বিশাল মিছিল সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশ যোগ দেন হাজরো সাধারণ মানুষ। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে তারা রাজপথে নেমে এসেছেন। এ সরকারের পরিবর্তন এখন জরুরি বলে মন্তব্য করে নরসিংদী থেকে আসা জাকির হোসেন বলেন সরকারের দু:শাসনে আমরা আর টিকতে পারছিনা। মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে।
সমাবেশের ব্যানারে লেখা হয়েছে 'গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের একদফা যৌথ ঘোষণা'।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, সমাবেশে অংশ নিতে সকাল ৯টা থেকে নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা। দুপুর হওযার আগেই কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এখন নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকা নেতা-কর্মীদের পদচারণায় লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতা কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীরর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক চিকিসৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ সমাবেশে অংশ নেন।
এদিকে ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে বড় বড় মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন তারা। এছাড়া নেতা-কর্মীরা মাথায় বিভিন্ন রঙের ক্যাপ এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থান রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে নেতা-কর্মীদের গাড়ি আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি অনেক নেতা-কর্মীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরল ইসলাম আলমগীর।