ঢাকা, শনিবার ২৭ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

‘রাজপুত্র’’জুতোর দোকানের কর্মচারী

ডেস্ক নিউজ।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-07-10, 12.00 AM
‘রাজপুত্র’’জুতোর দোকানের কর্মচারী

দ্রব্য ঢোলাকিয়া। গুজরাতের কোটিপতি হিরে ব্যবসায়ী সাভজি ঢোলাকিয়ার ২৭ বছরের পুত্র। অথচ ছ’হাজার কোটির সম্পত্তি ছেড়ে তাঁকে বেছে নিতে হয়েছিল সংগ্রামের জীবন। নামমাত্র টাকা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। বেকারির দোকান থেকে শুরু করে রাস্তার মুখরোচক দোকানের কর্মী হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি।সাভজির পুত্র দ্রব্য মাত্র সাত হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। এই কঠিন জীবনযাপনের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন কোচি শহরকে।মাত্র ২১ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলেন দ্রব্য। বাড়ি ছাড়ার সময় তাঁকে তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন তাঁর বাবা সাভজি।কী ছিল সেই তিন শর্ত! এক, দ্রব্য বাড়ির বাইরে যত দিন সংগ্রামের জীবন কাটাবেন, তত দিন তিনি তাঁর বাবার নাম ব্যবহার করতে পারবেন না। দুই, তিনি কোথাও এক সপ্তাহের বেশি চাকরি করবেন না। তিন, সঙ্গে থাকা সাত হাজার টাকা জরুরি অবস্থা ছাড়া তিনি ব্যবহার করতে পারবেন না।তিন শর্তের কথা মেনেই বাড়ি ছেড়েছিলেন দ্রব্য। সংগ্রাম আরও কঠিন করতে তিনি এমন একটা জায়গা বেছে নিতে চেয়েছিলেন যেখানকার ভাষা তিনি জানেন না। সেই কারণে তিনি কেরলের কোচি শহরকে বেছে নিয়েছিলেন।কোচিতে চাকরি চাইতে গিয়ে প্রায় ৬০ জায়গা থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে অধ্যবসায় এবং চাকরির মূল্য শিখিয়েছিল বলে দ্রব্য জানিয়েছেন।অনেকগুলি জায়গায় চাকরি চেয়ে খালি হাতে ফিরতে হলেও বেশ কয়েকটি দোকানে তিনি কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিল, বেকারি, জুতোর দোকান এবং বহুজাতিক খাবার সংস্থার আউটলেট। কল সেন্টারেও চাকরি করেছেন তিনি।মাসে ৪ হাজার টাকা আয় করা সত্ত্বেও প্রতি দিনের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল দ্রব্যকে। প্রতি দিন ৪০ টাকার খাবার এবং ২৫০ টাকায় উপযুক্ত মাথা গোঁজার জায়গা পেতে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল তাঁর।সংগ্রামে ভরা ওই জীবন কাটিয়ে এক মাস পর আবার বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন দ্রব্য।দ্রব্যের বাবা সাভজি জানান, ছেলেকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে পরিচয় করাতে এবং তৃণমূল স্তরের মানুষদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করানোর জন্য তিনি ছেলেকে ওই ভাবে জীবন কাটাতে বলেছিলেন।সাভজি জানান, এই ধরনের অভিজ্ঞতা তাঁর ছেলেকে আরও দক্ষ বানাতে পারে জেনেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।বর্তমানে দ্রব্যের বয়স ২৭। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারে এই প্রথা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। তাঁর তুতো ভাই-বোনেরাও এই কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন।ভবিষ্যতে যাতে সংস্থার ভার সামলানোর সময় তাঁদের কোনও অসুবিধা না হয়, সেই কারণেই ঢোলকিয়া পরিবারের তরুণ সদস্যদের এই প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান সাভজি ঢোলাকিয়া। ১২ বছর আগে তিনি এই সংস্থা শুরু করেন। হিরে উৎপাদন এবং রফতানি শিল্পে স্বনামধন্য এই সংস্থা।গুজরাতের অমরেলি জেলার দুধলা গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে সুরত এসেছিলেন সাভজি। চতুর্থ শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করা সাভজি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, এক দিন তিনি ঠিক সফল হবেন।দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়ে সাভজির জীবনে সাফল্য এসেছিল। আর সেই কারণে তিনি ছেলেকেও সেই পথে চলার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন বলে জানান সাভজি।