ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর সাথে সমান তালে এগিয়ে যাবে, কোনো মতে পিছিয়ে থাকবো না, এটাই আমাদের লক্ষ্য। ’রোববার (৯ জুলাই) ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৩-২৪’ এর নির্বাচিত ফেলোদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিই। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু বৃত্তি চালু করি। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ৯৮৬ জন শিক্ষার্থী/গবেষককে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বৃত্তি/অনুদান প্রদান করি। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’ প্রণয়ন করি, যা বিএনপি/জামাত জোট সরকার বাতিল করে দেয়। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়, যাদের আমরা বৃত্তি দিয়েছিলাম একটা প্রকল্পের অধীনে যখনই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন সেগুলি বন্ধ করে দিলেন। যারা পিএইচডি করছিলেন তারা খুব অসুবিধায় পড়ে গেলেন। যারা মাস্টার্স ডিগ্রি করছিলেন অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে খুব কষ্ট করে থাকতে হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের খোঁজখবর নিয়েছি এবং আমাদের প্রবাসী বাঙালিদের বলে অনেকের জন্য আমরা ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থ-বছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে আমাদের সরকার। আমরা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা আহরণে সক্ষম প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। এখন থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ পৃথিবীর সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাবে, আমরা কোনো মতে পিছিয়ে থাকবো না, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই মেধাবী, বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা লেখাপড়া করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের অনেকেরই পরিচয় আছে। সেজন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়াশোনা করছে। আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছি। কিন্তু যতদিন বাংলাদেশের নামটা উজ্জ্বল ছিল না, ততদিন অফার পেলে নিতাম, এখন আর বেশি নিই না। কারণ এখন আর দরকার নেই, বাংলাদেশ উঠে গেছে, এখন আর প্রয়োজন নেই। অনেকে আমাকে ডাকে, বলে, আমি বলি এখন তো আমার প্রয়োজন নেই, যখন প্রয়োজন ছিল নিয়েছি।
শিক্ষাক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে শিক্ষা-গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করছি। ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে একটি সমন্বিত শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। আমরা ব্যান্সডক আইন-২০১০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন-২০১১, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৫, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ আইন (সংশোধিত)-২০১৮, ‘বাংলাদেশে উচ্চ-শিক্ষার কৌশলী পরিকল্পনা: ২০১৮-২০৩০’ সহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করছি।
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যে আমাদের মেধাবী ছেলে মেয়েরা, ৪১ এর বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা। এখানে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে এটা আমি বলবো স্মার্ট পপুলেশন। সেই সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি সেটাও হবে স্মার্ট অর্থনীতি। আমাদের কৃষি, স্বাস্থ্য সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট হবে। সেবা দিতে গেলে যে দক্ষ জনবল দরকার নেই দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, আমাদের সোসাইটিও হবে স্মার্ট সোসাইটি। বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলতে চাই। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।