বুধবার সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আলাদা আলাদা সমাবেশ থেকে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। তবে ২০১৪ সালের পর এবারই তাদের সমন্বিতভাবে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে। এরই চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার, নয়তো সরকার পতনের হুমকি।চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝি বিএনপির এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অবশেষে শনিবার রাতে জানা গেছে, ১২ জুলাই দলটি সমাবেশের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বুধবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে তারা। দলটির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে সমাবেশ সফলে যৌথ সভাও করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। অবশ্য গতকাল রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি দলটি। কাল সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্র জানায়, যুগপৎ কর্মসূচিতে আন্দোলনের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেওয়া হবে। কর্মসূচির মধ্যে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রা, লংমার্চ ও রোর্ডমার্চ এবং সব শেষে ঢাকামুখী ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি থাকবে। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির চিন্তাও দলের মধ্যে রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বুধবার ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ থেকে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তারিখ ঘোষণা করা হবে সমমনা জোট ও দলের সঙ্গে বৈঠকের পর। এ মুহূর্তে এর বাইরে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
বছরজুড়েই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে নানা ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে তারুণ্যের সমাবেশ ও শ্রমজীবী মানুষের পদযাত্রার কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলোও পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। আজ সিলেটে, ১৭ জুলাই খুলনায় এবং ২২ জুলাই ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুরসহ ঢাকায় বড় ধরনের তারুণ্যের সমাবেশ করবে বিএনপির সহযোগী সংগঠন– ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই দাবি আদায়ের ফয়সালা করতে চায় বিএনপি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে আগামী অক্টোবর মাসেই তপশিল ঘোষণা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়তে চায় দলটি। লক্ষ্য অর্জনে ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনে ৩১ দফা যৌথ রূপরেখা এবং এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপি। প্রতিটি কর্মসূচিতে জনগণকে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনে রূপ দিতে চায় বিরোধী দলটি।আওয়ামী লীগের সূত্র থেকেও জানা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর লক্ষ্য করেই তৈরি হচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
একই সঙ্গে ১৯৯১ সালের আদলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়াও প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বিএনপির নেতৃত্ব। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা আরও জোরদার করবে দলটি। আন্দোলন ও নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন নিশ্চিতেও কাজ করছে বিএনপি। পাশাপাশি সরকারের অবস্থানও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পাল্টা কৌশল গ্রহণ করবে তারা।এবারের চূড়ান্ত আন্দোলনে আর পিছু হঠবে না বলে জানিয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাই দমন-পীড়ন মোকাবিলারও প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দল।