ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার রোধে সিটি করপোরেশন ও সরকারের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই প্রশ্ন তুলেন।তিনি বলেন, ‘‘ ডেঙ্গুৃ একেবারে সমস্ত বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি কিছুক্ষন আগে আমাদের মহানগরী দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম সাহেবকে হাসপাতালে দেখে আসলামৃ ১০৩/১০৪ ডিগ্রি জ্বর, প্লাটিলেট নেমে গেছে। ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত ধরতে পারেননি এটা কি ডেঙ্গু নাকি চিকনগুনিয়া.. নাকি অন্যকিছু, নাকী করোনাভাইরাস।”‘এই অবস্থা সারাদেশে। কালকে শুনলাম টেলিভিশনে যে, যাত্রাবাড়িতে এমন একটা ঘর নাই, বাড়ি নাই যেখানে ডেঙ্গু রোগী নাই। সিটি করপোরেশন কি করে? কলকাতা তো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। তারা যদি পারে তাহলে আমাদের দেশে যে এতো ট্যাক্স আমরা দেইৃ. এতো যে কথা বলে বড় বড়।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারপরে শুনলাম বিদেশ থেকে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে এসে সিটি করপোরেশনে চাকুরি দেয়ৃ কি একটা পদের নাম জানিৃ হিট অফিসার।”
‘‘ এখন আমরা যে হিটেড হয়ে গেলাম, আমরা এখন এই ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়া-করোনা ভাইরাস এসবে আক্রান্ত হয়ে আমরা কোনো স্বাস্থ্য সেবা না পেয়ে পেয়ে আমরা সব ‘হিটেড-বুটেড’ হয়ে যাচ্ছি।এখান থেকে আমাদের বেরুতে হবে।”
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি) ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
‘ওদের সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য’
দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের বিরুদ্ধে ১৫৩টা মামলা, ৯৬টা মামলা, ৮০টা মামল, ৯০ টা মামলাৃ আমাদের এখনো অনেক নেতা ১০ বছর যাবত জেলের মধ্যে আছে মিথ্যা মামলায়ৃ আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, লুতফুজ্জামান বাবরৃ বর্তমানে আমাদের যুব নেতা সাইফুল আলম নিবর, মোনায়েম মুন্না, এসএম জাহাঙ্গীর, গোলাম মাওলা শাহিন ৃ এসব নেতারা জেলে।”
‘‘ এই একমাসে আমাদের প্রায় ৮ হাজার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং গ্রেফতার করেছে। এটা গণতন্ত্রের লক্ষ্য, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন লক্ষ্য। আবার ওরা বলে, আওয়ামী লীগ যখন আসে তখন নাকী সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সেই ১৯৭২ সালে থেকে ১৯৭৩ সাল আওয়ামী লীগের সময়ে কেমন নির্বাচন হয়েছেৃ মেনন ভাইয়ের(রাশেদ খান মেনন) কথা মনে আছে, আপনাদের মনে থাকার কথা যে, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে কিভাবে নির্বাচিত করেছিলো। এই ঘটনাগুলো তারা সব সময় করে।এটাই হচ্ছে তাদের বডি কেমেস্ট্রি।”
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের বডি কেমেস্ট্রিতে গণতন্ত্র নাই। একটাই আছে সন্ত্রাস আর চুরি। আমাদের শ্রদ্বেয় বরণ্যে নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান বলেছিলেনৃ তখন ১৯৭৫ সা্লরে আগে এমন লুটপাট করছিলো যে, আওয়ামী লীগের নামটাই যেটার উনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেনৃ এটার নাম হওয়া উচিত নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি।”
‘‘ আর এই কথা শুনলে ওরা বলে নাকি আমার মুখে বিষ। আমার মুখে বিষ নয়, আমি যে সত্য সেই সত্য উচ্চারণ করি। বাংলাদেশের মানুষ এখন সত্য উচ্চারণ করছে, বাংলাদেশের মানুষ এই ভয়াবহ দানব মনোস্টার যারা আমাদের সমস্ত কিছুকে তচনচ করে দিয়েছে তাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে সকল বাংলাদেশীদের কাছে এই আহ্বান জানাতে চাই, দেশকে যদি বাঁচাতে হয়, মানুষকে যদি বাঁচাতে হয়, স্বাধীনতাকে যদি বাঁচাতে হয়, গণতন্ত্রকে যদি বাঁচাতে হয় আর কালবিলম্ব নয়, আর কোনো দ্বিধা নয়, রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এদেরকে সরিয়ে একটা সত্যিকার অর্থেই জনগনের রাষ্ট্র জনগনের সরকার জনগনের পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।”
‘সুইস ব্যাংকের অর্থ।। কালো বিড়াল বেরিয়ে আসছে’
বিদেশে অর্থপাচারের প্রসেঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ হঠাত করে শুনলাম সুইজারল্যান্ডের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ। কোনো দিন শুনলাম না। কেনো? আমরা শুনতে পাই, সুইস ব্যাংকে নাকি বাংলাদেশীদের টাকা অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। হঠাত করে আবার শুনলাম ওখান থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়েছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে।”
‘‘ কাকতালীয় জানি না, আমাদের নেতৃবর্গ তখন সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেনৃ । অর্থাত্ এই পুরো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত যেটাকা সেগুলো বিদেশের ব্যাংকে বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে রাখা হয়েছে যেখানে জবাবদিহিত করতে হয় না। এখন জবাবদিহি করতে হচ্ছে তো। থলের থেকে তো কালো বিড়াল বেরিয়ে আসছে। আজকে স্যাংশন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রৃ খুব বলছে আমরা ভয় পাই না, ভয় পাই না। ভয় পাই না দেশের মানুষকে তো বিপদে ফেলে দিয়েছে আপনারাৃ। সামগ্রিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি একেবারে চরম তলানিতে গেছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ ঋণ করতে করতে তারা প্রত্যেকটা মানুষকে ঋণ গ্রস্থ করে ফেলেছে। সাপ্লাইয়ার্সে ক্রেডিটের নামে ঋণ নিয়ে তারা (সরকার) আজকে আমি যেটা বলে বাংলাদেশকে ফতুর করে ফেলেছে।”
‘‘ এরপরে তারা বড় বড় গলায় কথা বলে। যারা চোর তাদের গলায় আবার জোর বেশি।”
আগামী নির্বাচন ‘অবশ্যই’ নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বার বার করে বলছি, সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার অবৈধ। আমি জোর করে এই কথা বলছি। এই সরকারের কোনো অধিকার নেই তাদের অধিনে নির্বাচন করারৃ.।”
‘‘ আওয়ামী লীগে এখন আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি তারা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক আওয়ামী লীগের লোকজনের চেহারার দিকে তাঁকাবেন তাদের চেহারা বদলে গেছে। যাদের ভালোমতো একটা ঘর ছিলো তার এখন পাঁচ তলা বাড়ি, যারা সাইকেলে চড়তো না তারা এখন বিরাট বিরাট দামি দামি গাড়ি চালায়ৃ, বিলাসিতার শেষ নাই । আর আমাদের সাধারণ মানুষের অবস্থা বঞ্চিত বঞ্চিত হতে নিচে নেমে গেছে।”
এনপিপির চেয়ারপারসন ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।