ঢাকা: জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের হোতা বাবুল মিয়া একই অপরাধের জন্য এই নিয়ে ছয়বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বারবার জামিনে বের হয়ে একই পেশায় কাজ করেন।শুধু তাই নয়, জালনোট প্রস্তুতের কারবারে বাবুল তার পাঁচ স্ত্রীকে যুক্ত করেন।ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গত দুই মাসে পাঁচ কোটি টাকার বেশি জালনোট বাজারে ছাড়েন বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা। আরও ৮২ লাখ টাকার জালনোট বাজারজাত করার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। এ ছাড়া দুই কোটি টাকা অঙ্কের জালনোট তৈরির কাগজ ও রসদ মজুত ছিল তাদের কাছে।সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। রোববার রাজধানীর লালবাগের কাশ্মীরি লেন এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠ তলা এবং তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে ৮২ লাখ টাকার জালনোটসহ চক্রের হোতা বাবুল মিয়াসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মহাজন বাবুল মিয়া, তার স্ত্রী মিনারা খাতুন, মূল কারিগর সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী মিলি খাতুন, মহিলা কারিগর আলপনা আক্তার, ইব্রাহিম, আফাজুল ওরফে রাসেল, হাবিবুল্লাহ ও দুলাল হোসেন। বাবুলের বাকি চার স্ত্রী গ্রেপ্তার হননি। অভিযানে জালনোট তৈরির ঘরোয়া কারখানা থেকে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জলছাপযুক্ত বিশেষ কাগজ, বিভিন্ন রকমের মনোগ্রাম সংবলিত স্ক্রিন, ডাইস, বিভিন্ন রঙের কালি, কাগজ কাটার যন্ত্র , কাচি, চাকুসহ প্রায় ২ কোটি টাকার জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার লালবাগের কাশ্মীরি লেন এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের তৃতীয় ও ষষ্ঠতলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে জালনোট তৈরি করার সময় হাতেনাতে কারখানার মহাজন বাবুল মিয়া, তার স্ত্রী মিনারা খাতুন, মূল কারিগর সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী মিলি খাতুন, নারী কারিগর আলপনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের হেফাজত থেকে একটি টিনের ট্রাংকে রক্ষিত সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত ৮২ লাখ টাকার জালনোট উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সূত্র ধরে কাশ্মীরি লেনের স্বপ্ন শপিং মার্কেটের পাশের একটা গলিতে চারজনকে সন্দেহজনকভাবে চলে যেতে দেখে তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ এবং শরীর তল্লাশি করে প্রায় ২৫ লাখ টাকার জালনোট উদ্ধারসহ ইব্রাহিম, আফাজুল ওরফে রাসেল, হাবিবুল্লাহ ও দুলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জালনোটের উৎস স্থলে নিয়ে যান তারা। পরে তাদের দেখানো মতে বাড়িটির তৃতীয় ও ষষ্ঠতলায় অভিযান চালিয়ে এই ঘরোয়া কারখানাটি আবিষ্কার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে বাবুল মিয়া এই চক্রের হোতা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, সবাই তাকে মহাজন বলে ডাকতেন। তিনি এর আগেও পাঁচবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। জামিনে বের হয়ে তিনি একই কারবারে লিপ্ত হন। তিনি এ পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছেন। তার সব স্ত্রী এই জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের সদস্য। গ্রেপ্তার হওয়া তার স্ত্রী মিনারা খাতুন তিনবার এবং সাইফুল ইসলাম দুইবার বিভিন্ন মেয়াদে জেল হাজতে ছিলেন। তিনি বলেন, জামিনে মুক্তি পেতে তাদের লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। অধিক সুদে এসব টাকা তারা ঋণ নেন। সেই টাকা পরিশোধের জন্য তারা আবার একই ব্যবসায় লিপ্ত হন বলে জানান। এই চক্রের বাকি সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলমান। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।