অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে প্রস্তাবিত বাজেট ‘কোনো দিক নির্দেশনা’ দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শুক্রবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।তিনি বলেন, ‘‘ বাজেট একটা দিয়েছেৃ মন্ত্রী বলছেন যে, একটা চমতকার বাজেট হয়েছে, সরকার বলছে যে, একটা অত্যন্ত সন্দুর বাজেট হয়েছে যেটা নাকী পরিবর্তন আনবে। কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া তারাই বলছে, এই বাজেট মানুষের মধ্যে কোনো স্বস্তি আনতে পারে নাই।”‘‘ যে ভয়ংকর মূল্যবৃদ্ধি, যে ভয়ংকর অর্থনৈতিক সংকট সেই সংকট এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে বাজেট দরকার ছিলো সেই বাজেট দিতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আবারও ওই গোঁজামিল। দুইয়ে দুই চার হয়, এক-দুই-তিন একটা করে দিয়ে বানিয়ে দিয়েছেৃ কি ভাবে টাকা আসবে, কোত্থেকে টাকা আসবে, কিভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে তার সম্পর্কে কোনো রকমের সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা নাই।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে তিনি গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপরে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত কার্টুন দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেখেন কার্টুনে একজন ভিক্ষুক তার দুই কান কাটা, সে একটা থাল নিয়ে ভিক্ষা করছে। আর তার বুকের মধ্যে একটা বোর্ড লাগিয়ে রেখেছে .. তার টিন নাম্বারৃ বুঝতে পারছেন। অর্থাত যারা আয়কর বর্হিভূতৃ তাদেরকেও দুই হাজার করে আয়কর দিতে হবে। ভিক্ষা করতে গেলেও এখন টিন নাম্বার থাকতে হবেৃ, হিসাব খুলতে গেলেও টিন নাম্বার থাকতে হবে।”
‘‘ এভাবে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে, এভাবে সাধারণ মানুষকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে আজকে আপনারা(সরকার) বড় বড় মেগা প্রজেক্ট করছেন, মেগা উন্নয়ন করছেন সেই আনন্দে আপনারাৃদেখেছেন যে, সুবেশী প্রধানমন্ত্রী, সুবেশী অর্থ মন্ত্রী, অত্যন্ত সুদর্শন ঘরভর্তি সংসদ সদস্যরা মিলে বাজেট প্রণয়ন করছেন। আর সাধারণ মানুষ যারা বাজার যাচ্ছেন তারা বলছেন যে বাজার থেকে আমি কিছু কিনে নিয়ে যেতে পারছি না। এটাই বাস্তবতা।”
তিনি বলেন, ‘‘ আজকে চাল-ডাল-তেল-লবন-পেঁয়াজ-আদা এমন ভাবে বেড়েছে দাম যে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে... এক ভদ্রলোক বলছেন, সামনে ঈদ আসছে কোরবানির ঈদ আমারও তো ইচ্ছা করে আমার পরিবারকে নিয়ে গরুর গোশত রান্না করে খাব। কিন্তু আদা কিনবো কোত্থেকে, পেঁয়াজ করবো কোত্থেকে ভ্যাট দেবো কোত্থেকে ৃএটাই বাস্তবতা। যে কারণে আজকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাস্তবতা বিবর্জিত একটা বাজেট যার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বাস্তবতার।”
‘তুমি বিদায় হও’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে এরা আমার জাতির ভবিষ্যতকে নষ্ট করছে, আমার সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে, মান-সন্মানকে বিলিন করে দিচ্ছে। সেজন্যই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়েৃ. আজকে আমাদের পরিস্কার কথা আমি একথা বলিনি যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনো, আমি একথা বলিনি যে, আমাকে ক্ষমতায় আনো।”
‘‘ আমরা দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, আমরা একটা অবাধ নির্বাচন চাই। অতীতের অভিজ্ঞতা যে, আমরা বুঝি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এজন্যই দাবি আমাদের একটাই দয়া করে বিদায় হও। অনেক করেছো এনাফ-এনাফ দয়া করে বিদায় হও। মানুষকে কষট না দিয়ে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা দিয়ে মানে মানে বিদায় হও।তা না হলে এদেশের মানুষ কিভাবে বিদায় করতে পারে তা তারা ভালো করে জানে।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, একেএম আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, অধ্যাপক লুতফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফখরুল আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।