ঢাকা, শুক্রবার ২৬ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫২ বছর

শাবান মাহমুদ

2023-05-21, 12.00 AM
বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫২ বছর

বাংলাদেশ প্রান্ত থেকে যখন কেউ আমাকে ফোন করেন, কুশল বিনিময় করেন তখন আমি বুঝতে পারি তারা আমার কাছ থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে জানতে চান। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য আমি ঘুরেছি। ভারতের মানুষের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে এখনো ব্যাপক কৌতূহল। পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, ওড়িশা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, আসামসহ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বাঙালি কমিউনিটিতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান নিয়ে সরব আলোচনা আমার ভালো লাগে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারত। প্রায় ১৩৫ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে যে আগ্রহ, সচেতন নাগরিক সমাজের যে কৌতূহল, বাংলাদেশের অকল্পনীয় উন্নয়নচিত্র নিয়ে রীতিমতো ভারতের শিক্ষিত সমাজে যে গবেষণা তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ভারতের রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতিতে বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে এখন এক শক্ত বন্ধন। এ বন্ধন অতীতে কোনো সরকারের আমলে কল্পনাও করা যায়নি। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে মিনিস্টার (প্রেস) হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমি দেশটির সাংবাদিক সমাজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংযোগ রাখার চেষ্টা করি। ভারতের মিডিয়া শিল্প অনেক বড়। বিভিন্ন রাজ্যের ভাষাও ভিন্ন। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন প্রকাশ হয় কয়েক হাজার দৈনিক পত্রিকা। সরকারি-বেসরকারি মিলে কয়েক শ টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টালসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করছেন শত শত সংবাদকর্মী। বিশ্ব মিডিয়ার একটি বড় অংশ ভারতজুড়ে। সাধ্যমতো আমি প্রায় প্রতিদিনই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলি। বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও। বিশ্ব গণমাধ্যমের আলোচিত অনেক বিষয় এড়িয়ে কেউ কেউ আমার কাছে জানতে চান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। বাংলাদেশের রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রায়ই কথা হয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কীভাবে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে যুগান্তকারী উন্নয়নে বাংলাদেশকে বদলে দিলেন সে বিষয়েও কথা হয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন যাত্রায় শেখ হাসিনার নিরলস অবদান এবং তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে বারবার।

ভারতের সাংবাদিকসমাজ ছাড়াও একজন নবীন কূটনীতিক হিসেবে আমার কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। গভীর আগ্রহে প্রায় সবাই আমার কাছে শুনতে চান বাংলাদেশের বদলে যাওয়া গল্প। কেউ কেউ অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করেন বিশ্বব্যাংকের সহায়তা এবং কোনো বিদেশি সাহায্য ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে কীভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ হলো? বাংলাদেশের মেধাবী তরুণরা কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে চান? বর্তমান সরকারের আমলে দেশের মানুয় এত ভালো আছে কীভাবে?

 

গত বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার বিষয়টি নিয়ে প্রশংসা করেছেন ভারতের সর্বস্তরের মানুষ। এ বিষয় নিয়ে আমারও একটা অনুসন্ধান রয়েছে। ভারতে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাপারে কিছু নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের আড়ালে চাপা পড়ে যায় বাংলাদেশের সম্প্রীতির আসল চিত্র। এই নেতিবাচক সংবাদের উৎস বাংলাদেশে সরকারবিরোধী অপপ্রচার। সাধারণ ঘটনাকেও অনেক সময় স্পর্শকাতর সংবাদ হিসেবে প্রচারের প্রবণতা। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক বিষয়টিকে বিতর্কিত করছে একটি মহল। অতীতের যে কোনো সরকারের আমলের চেয়ে বাংলাদেশে যে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছেন, শান্তিতে আছেন সে বিষয়টি অবশ্য ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক মহল সহজেই বুঝতে পারছে। নীতিনির্ধারক মহল মনে করে, বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলেও শেখ হাসিনার সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে; যা প্রমাণ করে সরকার সংখ্যালঘুদের পক্ষে।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দুই দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্ক এখন অনেকটাই আত্মার বন্ধন। আগে শুধু বাংলাদেশ থেকেই ভারতমুখী মানুষের ঢল নামত, এখন বদলে গেছে চিত্র। ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচিতেও দুই দেশ এগিয়ে। বাংলাদেশে যেতে আগ্রহীদের ভিসা আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দুই বাংলার মধ্যে যেন বইছে প্রাণের উৎসব।

দুই দেশের সম্পর্কের উচ্চতা টের পাওয়া যায় সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের নভেম্বরে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গোলাপি বলে অনুষ্ঠিত প্রথম দিবারাত্রি ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধন করেন। গত বছর মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘Guest of Honour’ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন। তা ছাড়া ভারতের সদ্যপ্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে একই বছরে বাংলাদেশ সফর করেন। করোনাকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর একই দেশে সফরের দৃষ্টান্ত আর দ্বিতীয়টি নেই। এটি দুই দেশের চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উষ্ণতার বহিঃপ্রকাশ। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন যাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সার্বিক দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি প্রাধান্য পেয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গভীর আন্তরিকতায় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বৈঠকে যোগাযোগ, নিরাপত্তা, অভিন্ন নদনদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও অনেক শক্তিশালী করেছে এবং আমরা আশাবাদী, আগামীতে এ সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে নিবিড় হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ভিত্তি ’৭১-এর চেতনা। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১৭ হাজার সদস্য শহীদ হয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেসব শহীদ ও দেশটির জনগণের অপরিসীম অবদানের কথা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় অনেক সেনা পরিবারের সদস্যকে সম্মাননা প্রদান করেছেন।

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ১২ সদস্যের পরিবারের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেন। এ ছাড়া ১ হাজার ৫৮২ শহীদ ভারতীয় সেনা সদস্যকে সম্মাননা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছর ভারত সফরকালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের মধ্যে ২০০ মুজিব স্কলারশিপ বিতরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর শুরু হিসেবে এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ জনের মধ্যে বৃত্তির অর্থ ও সনদ তুলে দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী যৌথভাবে উদযাপন বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রায় দাঁড় করিয়েছে সন্দেহ নেই।

এই স্মরণীয় মুহূর্তে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশ একসঙ্গে উদযাপন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময়ে ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী উভয়ের জীবনের ইতিহাস নিয়ে ডিজিটাল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভারতের জাতির পিতা এবং বিশ্বব্যাপী অহিংস আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা বাপু মহাত্মা গান্ধীর সমান্তরালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ এবং ভারতের পাশাপাশি ১৮টি দেশের রাজধানীতে তুলে ধরা হয়েছে।

গত অর্থবছরে ভারত-বাংলাদেশের রপ্তানি ১০০% বৃদ্ধি পেয়ে মার্কিন ডলার ২ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানির ক্ষেত্রে ৭০% বৃদ্ধি পেয়ে তা মার্কিন ডলার ১৬ বিলিয়ন পেরিয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসকল্পে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুই দেশের মধ্য বাণিজ্য বাড়াতে Comprehensive Economic Partnership Agreement (CEPA) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য জ্বালানি সংকট মোকাবিলায়ও উভয় দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশ ভারতের ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষা ও সেভেন সিস্টার্সে স্থিতিশীলতা আনয়নে যে ভূমিকা রেখেছে তা ভারতের সকল পর্যায়ের নেতৃত্ব অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য যা সেভেন সিস্টার্স নামে খ্যাত- আসাম, ত্রিপুরা, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয় ও মণিপুরে এখন শান্তির সুবাতাস। উলফার অন্যতম শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতে হস্তান্তর করা হয়। ভারতের মিডিয়ায় এ বিষয়ে প্রায়ই বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে প্রতিবেদন, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে।

বর্তমানে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। অব্যাহত কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত ত্রিদেশীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগসংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক এবং পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগসংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের খসড়া আলোচনাধীন।

এখন কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে আগরতলা যেতে হলে ভারতের লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা এবং দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় সর্বোচ্চ ৩৫০ মাইল। দীর্ঘদিন ধরে ভারত এ সুবিধা চেয়ে আসছিল, যা দুই দেশের উষ্ণ সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা লাইন চালু হবে। তারপর শাহজাদপুর-কুলাউড়া সম্পন্ন হবে। পেট্রোপোল-বেনাপোল, গেদে-দর্শনা, বিরল-রাধিকাপুর কানেকটিভিটি সামনে রয়েছে; যা আগামী দিনে আরও গভীরতর ও নিবিড় হলে দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে বলে বিজ্ঞমহল বিশ্বাস করে।

বর্তমান সরকারের আমলে দুই দেশের রেল ব্যবস্থাপনায়ও এসেছে আমূল পরিবর্তন। সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুড়িমারী স্থলবন্দর পরিদর্শন শেষে রাজশাহীতে কর্মরত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধ থাকা সব রেলপথ চালু করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আশা করি এ যোগাযোগমাধ্যমগুলো চালু হলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারীসহ সব স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে।

পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও ধারাবাহিক সন্তোষজনক সমাধানের খবর দুই বাংলার মধ্যে সৃষ্টি করেছে প্রাণের সঞ্চার। বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির অমীমাংসিত বিষয়টির জট খুলবে বলেও আশা করা হচ্ছে। ফেনী নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ ছাড়া মনু, মহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার- এ ছয়টি অভিন্ন নদনদীর পানি বণ্টনের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে দুই দেশ কারিগরি তথ্য আদান-প্রদান ও কাঠামো স্থাপনে সম্মত হয়েছে। গঙ্গার পর প্রথমবারের মতো অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে যার ফল রহিমপুর সংযোগস্থলের মাধ্যমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা পাওয়া যাবে। তিস্তাসহ উল্লিখিত ছয়টি অভিন্ন নদনদীর পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের জন্য সার্বিক কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, তিস্তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কংগ্রেস কিংবা বিজেপি উভয় সরকার চুক্তিটি সই করার ব্যাপারে রাজি আছে।

গত ৯ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার পেট্রাপোল স্থলসীমান্তে অনুষ্ঠিত ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া ও বিএসএফের একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। হাজার বছর ধরে একই সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে চলা দুই বন্ধুরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক এখনো আবহমান। তাই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কেউ ছিন্ন করতে পারবে না। এ সম্পর্কে আরও নতুন গতি আসবে।

প্রায় আড়াই বছরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমিও বলতে পারি, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখন এক অনন্য উচ্চতায়, ৫২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মাত্রায়। এ কৃতিত্ব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। সম্পর্কের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ুক দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্বে, ভালোবাসায়।

লেখক : প্রেস মিনিস্টার, বাংলাদেশ হাইকমিশন, নয়াদিল্লি