ঢাকা, মঙ্গলবার ৩ই ডিসেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

বর্তমান ‘সরকারের সময় শেষ’:ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-05-19, 12.00 AM
বর্তমান ‘সরকারের সময় শেষ’:ফখরুল

বর্তমান ‘সরকারের সময় শেষ’ বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আজকে এই অবস্থা যতই চিল্লা-ছিল্লি করেন, যতই জাপান, যুক্তরাজ্য, আমেরিকার আর সৌদি আরব, কাতার, চীনে যান- কোনো লাভ হবে নাই। সময় শেষৃ। এটাই বাস্তবতা।”‘‘ আমি বলতে চাই- এখনোও সময় আছে জনগনের চোখের ভাষা পড়ুন, জনগনকে মুক্তি দেন এবং জনগনের যে দাবি উঠেছে সেই দাবি মেনে নেন।”

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ উপর থেকে নেমে আসুন। এই গণভবন থেকে বের হন, পাইক-পেয়াদা, মোরকেনদাজ, এসএসএফ, সোয়াত এগুলো বাদ দিয়ে এই মানুষের সামনে এসে দাঁড়ান। দেখুন তারা কি বলে আপরাদের।”

‘‘ মানুষের চোখের ভাষা বুঝুন। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মানুষ আর বাঁচতে পারছে না।”

সরকারি কর্মচারি-কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এর সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যায়ভাবে অন্যায় কোনো কিছু করবেন না যা আমাদের বিরুদ্ধে যাওয়া হবে।”

‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলতে চাই, এই সরকার দেশে-বিদেশে সমর্থন হারিয়েছে।এখন দেশের মানুষ যখন চায়, গণতান্ত্রিক বিশ্ব চায় যে, এখানে একটা সুষ্ঠু, সঠিক, অবাধ, অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন হোক এবং সেটা তারা জানেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সম্ভব হবে না। তাই বলতে চাই, আপনারা দয়া করে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না সেখানে আপনারাও চিহ্নিত হয়ে যাবেন।”  

‘আর কিছুদিন কষ্ট করতে হবে’

জনসমাবেশে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, আর কিছু কষ্ট করতে হবে। এই সরকারকে টেনে না নামালে এরা যাবে না। সেজন্য আমাদেরকে সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, ব্যক্তি-সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।”

‘‘ ঐক্যবদ্ধ করে দূর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করে ঝড়ের মতোৃজনতার উত্তাল তরঙ্গ পরাজিত করতে হবে। আজকের এই সমাবেশ শুধু সভা নয়, এই সভা আপনাদের শপথ নেয়ার সভা। আমাদের জীবনকে বাজি রেখে এই দেশকে মুক্ত করবার জন্য, এই দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ৃ. আমাদের আজকে একটা যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে। সেই যুদ্ধ আমাদের নিজেদের বাঁচানোর যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ জাতিকে বাঁচানোর যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যুদ্ধ। আসুন আমরা সেই শপথ নিয়ে এই আন্দোলনে আরো বেগবান করি এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান যে ডাক দিয়েছেন- ‘ফয়সালা হবে কোন পথ, রাজপথে’, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’... করার জন্য আমরা আজকে রাজপথে ফয়সালা করে এই দানব সরকারকে পরাজিত জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”

গায়েবী মামলায় গ্রেফতার, নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগেরে ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। ঢাকা ছাড়াও শুক্রবার দেশের আরো ২৭টি মহানগর-জেলায় এই সমাবেশ হয়।

সমাবেশে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা ‘নির্র্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই’, ‘জনগন ব্যালট চায়, পুলিশের বুলেট নয়’, ‘ব্যালট চাই, ভোট দেবো’ ইত্যাদি প্লাকার্ড হাতে নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়।

‘সরকার মরণ কামড় দিচ্ছে’

বিদ্যুত-শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। তারা এই শেষ সময়ে টিকে থাকার জন্য মরণ কামড় দিচ্ছে। এই যে মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা- কোন দেশে আমরা বাস করি। হাইকোর্ট থেকে জামিন দেয়, সেই জামিন নিয়ে নিম্ন আদালত গেলে সেই জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কোনো ঘটনাই ঘটেনি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে।”

‘‘ এই আন্দোলনের আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছেন। আজকে একটু আগে শুনলাম খুলনায় আমাদের সমাবেশে গুলি হয়েছে। গুলি করে আমাদের জনগনের এই আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না। তারা তো অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছেন, ১৫ বছর ধরে ধরে চেষ্টা করছে। ”

‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ওরা বলেন কি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকী কবরে চলে গেছে, বিলিন হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আপনারা যখন চেয়েছিলেন তখন ছিলো এটা ভালো.. সেদিন তো শেখ হাসিনা আপনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনটাই মানবো না।”

‘‘ আজকে আমাদের পরিস্কার কথা- এদেশের মানুষ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য, নিজের ভোট নিজে দেবার জন্য এবং ভোটের রেজাল্ট ঘরে আনার জন্য তারাও তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন মানবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, আমরা সংঘাত চাই না, আমরা কনফোনট্রেশন চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়মাতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। আমরাও মনে করে নির্বাচনই এর একমাত্র উপায়।”

‘‘ সেই নির্বাচন কখনোই আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। আমরা ২০১৮ সালে নির্বাচন দেখেছিৃ ২০১৪ সালে দেখেছিৃ.।তাদেরকে আর বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। ওই আপনার (শেখ হাসিনা) অধীনে এবার নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমাদের খুব পরিস্কার কথা, আমাদের প্রথম শর্ত আমরা বলেছি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানসহ ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।”

‘‘ আপনারা সংসদ রাখবেন আর আমরা নির্বাচন করবো-এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এমপিরা এমপি থাকবেন আর এমপি ইলেকশন হবে সেই নির্বাচন কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না। সেই কারণে সংসদ আগেই বিলুপ্ত করতে হবে।”

‘ইসির নতুন আইন নিয়ে প্রশ্ন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই নির্বাচন কমিশন কেমন নির্বাচন করবেন তার প্রমাণ তো আজকের পত্রিকায় দেখলাম যেটা আপনারা একটা নতুন আইন করতে যাচ্ছেন। যে নির্বাচন কমিশন আসলে কোনো নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাটা কোথায়?”

‘‘কাকে বুঝাচ্ছেন?বাংলাদেশের সব মানুষকে কি বোকা মনে করেন, বাংলাদেশে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেন। আর কতদিন প্রতারণা করবেন। আর পারবেন না।”  

মহানগর ‍উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর নেওয়াজ আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, পারভেজ রেজা কানন, রফিক শিকদার, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ মহানগর উত্তরের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।