আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে বিদেশের শুভাকাঙ্খীরা। এ সমঝোতা উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা কতিপয় দেশের কূটনীতিকরা। তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করাতে চাইছেন । এই প্রস্তাবে রয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তার জন্য দশ সদস্যের একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টা থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী এই উপদেষ্টাদের পরামর্শেই নির্বাচালীন সময়ে সব কাজ করবেন এবং তাদের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া রূপরেখায় এটাও বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেওয়ার প্রধান কাজ হবে উপদেষ্টাদের । এই নির্বাচনকালীন সরকারের সময় মন্ত্রীসভা থাকবে না, এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতা আছে। একটি মতে বলা হচ্ছে, মন্ত্রীসভা থাকলেও সেটি অকার্যকর মন্ত্রীসভা থাকবে। তবে অন্য একটি মতে বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, অন্য মন্ত্রীরা থাকবেন না। মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালন করবেন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ উপদেষ্টারা। এই উপদেষ্টারাই তখন মন্ত্রীর কাজ করবেন।
এমনকি এই প্রস্তাবে সম্ভাব্য কারা উপদেষ্টা থাকতে পারেন, তাদের নাম নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই নামগুলো চূড়ান্ত করবে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। তবে সম্ভাব্য উপদেষ্টা কারা থাকতে পারেন, এরকম কিছু নাম পশ্চিমা কূটনৈতিকরাও বিবেচনা করছেন এবং এ নামগুলো প্রস্তাবের সঙ্গে রাখবেন বলে জানা গেছে।
এই নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টায় যাদের নাম থাকতে পারে, তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা, সাবেক সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া, পুলিশের থেকে একজন নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য সাবেক পুলিশ প্রধান, বিচারকদের মধ্য থেকে আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত নিরপেক্ষ বিচারপতি। এছাড়াও, ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন পেশায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদেরকে উপদেষ্টা হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, উপদেষ্টামণ্ডলীতে চারজন আওয়ামী লীগের পছন্দের ব্যক্তি এবং চার জন বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দুইজন পছন্দের ব্যক্তি রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এ রকম একটি পরিকল্পনা মাঠে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে অন্য একটি মতামত হচ্ছে, নিরপেক্ষ মানে নিরপেক্ষ, আওয়ামী লীগ বিএনপি নয়, বরং কূটনৈতিকরা যে সমস্ত ব্যক্তিদেরকে নিরপেক্ষ এবং বিতর্কহীন মনে করবেন, তাদের নামই প্রস্তাব করার কথা আলাপ আলাচনা চলছে। তবে এই আলোচনা কতটুকু সত্যি তা সময়ই বলে দিবে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা দলীয় চিন্তার উর্ধ্বে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আলোকিত এবং প্রতিষ্ঠিত। এরাই নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন। কোনো দলের অনুগত নয়, বরং নিজস্ব ব্যক্তিত্বে উজ্জলদেরকেই এই নির্বাচনকালীন সরকারে রাখা হবে। তবে একটি সূত্র বলছে, এগুলো সবই খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও সময় লাগবে। তবে কূটনীতিকরা বসে নেই, তারা এই নিয়ে কাজ করছেন, যেন সামনে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত না হয়।