ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

সরকার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে:ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-05-04, 12.00 AM
সরকার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে:ফখরুল

বর্তমান সরকার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এদেরকে কোনোমতেই ক্ষমতায় আর আসতে দেয়া যাবে না।গতকাল ওয়াশিংটনে রিজ কার্লটন হোটেলে বাংলাদেশী প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের জবাবে দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব জনগনের প্রতি এই আহ্ববান জানান।তিনি বলেন, ‘‘ গতকাল ওয়াশিংটনে বলেছেন বর্তমান যে অবৈধ সরকার তার প্রধানমন্ত্রী যে, কোনো মতেই স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না।”‘‘ আমিও একই কথা বলি- কোনো মতেই স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। দূঃখজনকভাবে, অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে আওয়ামী লীগ আজকে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ‘কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের যে লক্ষ্য ছিলো, যে আশা ছিলো, যে  আকাংখা ছিলো- একটা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, একটা বহুদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা সেটাকে সম্পূর্ণভাবে ধবংস করে দিয়ে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই পুরনো কায়দায়ৃ.।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, এই সরকার আজকে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”

‘‘ যে সরকার মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে না, যে সরকার দেয়ালের লিখন দেখতে পারে না, যে সরকার মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পারে না তাকে তো আমরা গণশত্রু ছাড়া আর কি বলতে পারি।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে সাবেক মন্ত্রী সুনীল কুমান গুপ্তের ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়। এই স্মরণসভাটি জাতীয় প্রেসক্লাবে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহুর্তের তা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ বাতিল করায় নিন্দা জানান আলোচনা সভার সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল।

সুনীল কুমার গুপ্ত ২০০৯ সালে ৩০ এপ্রিল মারা যান। তিনি বাকেরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনবার জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদের মন্ত্রিসভারও সদস্য ছিলেন তিনি।

‘ডিজিটাল আইন : সরকারের দাম্ভিকতা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে যে সমস্ত আইন করছেন সরকার। কত বড় দাম্ভিকতা আপনাদের। পরিস্কার করে সব মানুষ যখন বলছে যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করুন। তখন আপনারা বলছেন, এটা বাতিল হবে না।”

‘‘ কেনো হবে না? আপনাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ওটা (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) একটা হাতিয়ার হিসেবে আপনারা ব্যবহার করছেন, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সুতরাং সেই অস্ত্রকে আপনারা বাদ দিতে চান না।”

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেই কিন্তু দেশ স্বাধীন করেছে, এদেশের মানুষ নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, এদেশের মানুষ তারা আজকে সংগ্রাম শুরু করেছে, লড়াই শুরু করেছে এই লড়াইয়ে অবশ্যই গণতন্ত্রের বিজয় হবে।”

‘‘ এই লড়াইয়ে অবশ্যই যারা সংগ্রাম করছেন তাদের বিজয় হবে এবং এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিবাদ পরাজিত হবে।”

‘দেশের অস্তিত্ব থাকবে না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সকলকে বলব, এটা ছড়িয়ে দিন মানুষের মাঝে যে, আজকে আমাদের জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আজকে আবার যদি ওই গণতন্ত্র বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা ক্ষমতায় আসে তাহলে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে না। আমি বার বার করে বলছি যে, এই সরকার স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, জাতির অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”

‘‘ আজকে সমগ্র জাতিকে তারা বিভক্ত করে ফেলেছে, সমগ্র জাতির মধ্যে হানাহানি এমন পর্যায় নিয়ে গেছে যে, এখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব। আজকে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে, এই জাতিকে কি আবার একটা সুস্থ জায়গা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই প্রশ্নটা কেনো আসে? এজন্য আসে যে, আজকে সমস্ত স্টাকচারটা রাষ্ট্রীয় কাঠামোটাকেই তারা একেবারে পয়েজোনাস করে দিয়েছে, বিষাক্ত করে দিয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘‘ কোথায় আপনি সুরাহাটা পান। বিচার ব্যবস্থা তারা সম্পূর্ণ দলীয়করণ করে ফেলেছে। তারা প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। আজকের পত্রিকায় দেখলাম এর মধ্যে তারা নতুন করে ৫ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দিচ্ছে, দেখলাম প্রায় ১৮‘শ সাব ইন্সপেক্টার তারা নিয়োগ দিচ্ছে।নির্বাচনের ঠিক আগে আগেৃ এবং সেখানে উল্লেখও করা হচ্ছে স্বাধীনতা স্বপক্ষের ব্যাক্তিদের ৃ আসলে সেখানে আওয়ামী স্বপক্ষের লোকদের সেখানে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।”

‘‘ একটা স্কুলের শিক্ষক, নিম্ন শ্রেনীর কর্মচারি তার নিয়োগের সময় একইভাবে দেখা হয় সে কোন দিকে আছে। শুধু তাই না আবার টাকাও দিতে হয়, ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ এখন জাতীয়করণ হয়ে গেছে। ঘুষ ছাড়া, টাকা ছাড়া কোথাও কোনো চাকুরি হয় না এবং সেখানে দেখা হয় সেটা আওয়ামী পন্থি কিনা।”

‘জনগন জেগে উঠেছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। ইতিমধ্যে আমাদের ১৭জন তরুন যুবক তারা তাদের বুকের রক্ত ঠেলে দিয়েছে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্যৃ.।হাজার হাজার মানুষ কারাগারে, সহাস্রাধিক মানুষকে গুম করেছে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেৃ.। ”

‘‘ আপনারা গৌরনদী থেকে যারা এসেছে এখানে কারো বিরুদ্ধে মামলা এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনাদের গৌরনদী তো পার হওয়া যায়। ওখানে প্রবল প্রতাপশালী দানবের সমস্ত লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। গেলে এই গাড়ি ভাংগে, মানুষজনকে মেরে মামলা দেয়। এটা কতদিন? কতদিন আমরা এই অত্যাচার সহ্য করব, কতদিন আর এই ভয়ংকর একটা দানবের কাছে নতি স্বীকার করব।”

তিনি বলেন, ‘‘ সময় এসেছে এখন উঠে দাঁড়াবার, সময় এসেছে এখন সেই ১৯৭১ সালের সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার যে চেতনা সেই চেতনাকে সামনে নিয়ে আমাদেরকে এখন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”

‘‘ আজকে সেজন্য আমরা সমস্ত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা ঐক্য গড়ে করেছি। তাদেরকে নিয়ে আমরা যুগপত আন্দোলন করছি। সারাদেশে ইতিমধ্যে আমরা সারাশে একটা আশা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এই আশা জাগানিয়া যে গান সেই গানকে সামনে নিয়ে আমাদের এই দেশকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না, যেদেশের মানুষ তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে না, কথায় কথায় মামলা দিয়ে দেয়া হয় সেই দেশের মানুষকে শৃঙ্খল ভেঙে এগিয়ে আসতে হবে।”

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন,সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, বরিশাল বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান খান মুকুল, প্রয়াত নেতা কনিষ্ঠ পুত্র সঞ্চয় কুমার গুপ্ত প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।