ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষায় এক সংগ্রামী মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-04-15, 12.00 AM
সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষায় এক সংগ্রামী মানুষ

দেশের অন্যতম প্রবীণ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ আলতাফ হোসেন ১৯৪৭ সালে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৪নং নিয়ামতি ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের ঢালমারা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৭০ সালে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে বিগত ৪৬ বছরে দৈনিক আজাদ, দৈনিক গণকণ্ঠ, দৈনিক জনতা, দৈনিক সমাজ, দৈনিক ইনকিলাব, পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারের বাংলা সংবাদ বিভাগে কাজ করেন। তাছাড়া বেতারে বিভিন্ন কথিকা ও সংবাদ পর্যালোচনা লিখেছেন দীর্ঘদিন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। তিনি নজরুল একাডেমীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে এখনও সম্পৃক্ত রয়েছেন। তার উদ্যোগেই ১৯৮২ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী দেশের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের একক সংগঠন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে তার বহু প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিয়মিত পর্যালোচনামূলক লেখা লিখে আসছেন।

বরিশাল বিভাগের বাকেরগঞ্জ থানাধীন ১৪নং নিয়ামতি ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের ঢালমারা গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী মরহুম আবদুল কাদেরের জ্যেষ্ঠ পুত্র মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের জন্ম ১৩৫৪ সালের ১১ই আশ্বিন অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। পিতার কর্মস্থল ঢাকা শহরে মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের শিক্ষা জীবন অতিবাহিত হয়। তিনি কমলাপুর প্রাইমারী স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুল, কায়েদে আজম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন ১৯৭০ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন। সেই বছর তিনি সদ্য প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রামে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি দৈনিক গণকন্ঠে যোগদান করেন। পরবর্তী পর্যায়ে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, দৈনিক সমাজ, দৈনিক আজাদ ও দৈনিক জনতায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশিত হলে তিনি সহকারী বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন এবং ’৯৫ সালের ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। বিশিষ্ট বেতার ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ আলতাফ হোসেন ১৯৭০ সালের ১৬ই অক্টোবর তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে ‘কথক’ হিসেবে যোগ দেন। তিনি ঢাকা বেতারে প্রায় সব ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন কথিকা ও সংবাদ পর্যালোচনা লিখে তিনি সুনাম অর্জন করেন। ঢাকা বেতারের বার্তা বিভাগেও তিনি দু’বছর কাজ করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় ভিত্তিক বার্তা প্রতিষ্ঠান এফএনএস (ফেয়ার নিউজ সার্ভিস)এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার সম্পাদনায় বিগত ৩৮ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ জাতীয় সংবাদপত্র সমতল।

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন্য সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মধ্যে কবি জসীম উদ্দীনের সাহিত্য সাধনা সংঘ, অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমদের পূর্ণিমা বাসর, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনের সাওগাত সাহিত্য পরিষদ অন্যতম। মুহম্মদ আলতাফ হোসেন আলাপন সাহিত্য গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, জাতীয় কৃষ্টি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলা সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ লেখক সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা। তার সম্পাদনায় ‘আলাপন’ নামের সাহিত্য সাময়িকীর বেশ কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। দেশের বহু বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিকের সংস্পর্শে তিনি এসেছেন। তাদের মধ্যে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, ডঃ কাজী দীন মুহম্মদ, কবি তালিম হোসনে, মোহাম্মদ মোদাব্বের, কবি জসিম উদ্দীন, আকবর হোসেন, মুজিবুর রহমান খাঁ, আখতার-উল আলম, ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমদ, এ.কে.এম মহিউদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল গফুর মো.শাহেদ আলী অন্যতম।

মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখির অভ্যাস। তার প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে এক সময় তিনি আজাদ, পূর্বদেশ, বাংলার বাণী, দৈনিক জনপদ ও ঢাকা ডাইজেস্ট পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে মুহম্মদ আলতাফ হোসেন একটি পরিচিত নাম। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন সংগ্রামী সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দেশের গ্রামীণ সাংবাদিকদের প্রতি রাজধানীতে কর্মরত তথাকথিত বনেদি সাংবাদিকদের অবহেলার প্রতিবাদে তিনি ১৯৮২ সালে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা গঠন করেন।

১৯৮২ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সাংবাদিক সংস্থাকে তিনি নেপথ্যে থেকে গড়ে তোলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৯৮৯ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ২০১৮ সালের এক সভা বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্থার বর্তমান সভাপতি মুহম্মদ আলতাফ হোসেনকে সংস্থার আজীবন সভাপতি ঘোষণার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত সংস্থার ১৭তম দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে মুহম্মদ আলতাফ হোসেনকে সংস্থার আজীবন সভাপতি ঘোষণার প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে পাস হয়। তাছাড়া গত ২৩শে জানুয়ারি ২০১৮ ইং অনুষ্ঠিত সর্বোচ্চ (স্থায়ী) পরিষদের সভায়ও প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। সংস্থার সকল কমিটি প্রস্তাবটি পাস করায় মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের জীবিত অবস্থায় সংস্থার সভাপতি পদে আর কোন নির্বাচন হবেনা। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য পদ পূরণে মেয়াদ শেষে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এখনও এই পদে বহাল রয়েছেন মুহম্মদ আলতাফ হোসেন । তাঁর বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশের সকল জেলা ও অধিকাংশ উপজেলা/থানায় জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা পরিচিত লাভ করেছে ,বর্তমানে সারাদেশে সদস্য সংখ্যা রয়েছে ১৬ হাজার এবং ৬৪ টি জেলা ও ৩০০ এর ওদিক উপজেলায় রয়েছে শাখা কমিটি। এছাড়াও দেশের বাইরে সৌদি আরব, আমেরিকা, জার্মান, লন্ডন, কাতার, বাহরাইন সহ বেশ কয়েকটি দেশে রয়েছে কমিটি যা সাংবাদিক নেতা মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার আদায় নিয়ে কাজ করছেন এবং টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সর্বস্তরের সাংবাদিকদের একক সংগঠন হিসেবে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা (জেএসএস) বিকাশ লাভ করেছে। আর মুহম্মদ আলতাফ হোসেন দেশের নবীন ও অবহেলিত গ্রামীণ সাংবাদিকদের পরিচয় পতাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।এছাড়াও তিনি প্রথম শ্রেণির নিরপেক্ষ জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ নিউজ সিন্ডিকেট-বিএনএস’র চেয়ারম্যান ও এফএনএস’ প্রধান সম্পাদক ছিলেন। জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ও বিএনএস(বাংলাদেশ নিউজ সিন্ডিকেট)’র ব্যানারে তিনি দেশের কয়েক হাজার সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে পেশাগতভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। তাদের অনেকেই এখন দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র, গণমাধ্যম ও টিভি চ্যানেলে দক্ষতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বিকাশ ও উন্নয়নে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুহম্মদ আলতাফ হোসেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের আয়োজিত সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশিবিরে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মুহম্মদ আলতাফ হোসেন কলেজ অব জার্ণালিজম-এর প্রিন্সিপাল ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বেসরকারী উদ্যোগে সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সৈয়দ তাজ-ঊস-শফী। কিন্তু প্রায় ৫ বছর পর নানা কারণে ২০০১ সালের পর কলেজটি আর চালনো যায়নি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মিডিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দেশের সাংবাদিক সমাজ বিশেষ করে গ্রামীণ সাংবাদিক সমাজের কল্যাণে মুহম্মদ আলতাফ হোসেন আজীবন নিবেদিত প্রাণ। দেশের সংবাদপত্র জগতকে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা এবং সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের প্রয়াস নিরন্তর। দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে একটি সুষ্ঠু ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা এবং সর্বস্তরের সাংবাদিক ভাইদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি প্রণয়ন করেছেন ২১ দফা দাবীনামা। এসব দাবী বাস্তবায়িত হলে দেশের গ্রামীণ ও শহুরে সব ধরণের সাংবাদিকদের রুটি রুজি ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত হবে। তার নেতৃত্বে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা এই ২১ (একুশ) দফা বাস্তবায়নে সারাদেশে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন ও স্ত্রী আছিয়া হোসেন অত্যন্ত সফল দম্পতি। তাদের দুইটি পুত্র সন্ত্বান। জ্যেষ্ঠ পুত্র ডাঃ মুহম্মদ মুনীর হোসেন ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশের কাট্রি প্রোগ্রাম অফিসার , কনিষ্ঠ পুত্র মুহম্মদ মনজুর হোসেন সিটি ব্যাংকের অফিসার। দুই পুত্র, পুত্রবধুদ্বয় এবং উভয় পক্ষে তিন নাতী-নাতনীসহ এই সাংবাদিক নেতা দুনিয়াতেই জান্নাতী সুখে বসবাস করছেন। তিনি যেন পরকালেও জান্নাত লাভে ধন্য হন সেই দোয়া তার কাম্য সর্ব মহলের কাছে।