ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

চৌকি বসিয়ে বিক্রি শুরু বঙ্গবাজারে

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-04-13, 12.00 AM
চৌকি বসিয়ে বিক্রি শুরু বঙ্গবাজারে

অবশেষে বঙ্গবাজারে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চৌকি। ঈদের আগে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেচাকেনা শুরু করেছেন কিছু ব্যবসায়ী। আগুনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট মালামাল নিয়েই চৌকিতে বসেছেন তারা। তবে খোলা আকাশের নিচে কোনো ছাউনি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তীব্র গরমের কারণে হাঁসফাঁস অবস্থা ব্যবসায়ীদের। রোদের তাপ থেকে বাঁচতে হাতে ছাতা ধরে বিক্রি করছেন তারা। বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে চৌকি নিয়ে বসার সুযোগ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বুধবার দুুুুপুরে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। 

 

উদ্বোধন শেষ মেয়র বলেন, আগুনে হাজারো ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আগুন পুরোপুরি নেভাতে তিনদিন সময় লেগেছে। পরে সেখান থেকে কয়েক হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করেছি। পুরো জায়গাটা খালি করেছি। ঈদকে সামনে রেখে আমরা বলেছিলাম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাতে এখানে ব্যবসা শুরু করতে পারি। সেটি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। সবার সহযোগিতায় আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। এরইমধ্যে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছি।

 

তিনি বলেন, বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় দেশের সবাই এগিয়ে এসেছেন।  তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। এর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, বাঙালি সহায়তা করতে জানে। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এখন আমরা স্ব স্ব জায়গায় দোকান বসিয়ে দিচ্ছি। সেভাবে সবকিছু তৈরি করে দিচ্ছি। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। যদিও ঈদের আগে এটা সামান্য। ঈদের পরে ব্যবসায়ীদের জন্য আরও কীভাবে কী করা যায়, তা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ মার্কেট সমিতির সবাইকে নিয়ে বৈঠক করবো। আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বঙ্গবাজার সহায়তা তহবিলে অনুদান দেবো।

 

জানা গেছে, বঙ্গবাজারে এক ব্যবসায়ীর একাধিক দোকান থাকলেও প্রত্যেক দোকানি একটি চৌকি বরাদ্দ পাবেন। গতকাল বঙ্গবাজারের নিচতলা ও দ্বিতীয়তলার বরাদ্দ দেয়া হলেও তৃতীয় তলার দর্জির দোকানিরা কোথায় বসবেন তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সরজমিন দেখা যায়, বঙ্গবাজারে পোড়াস্তূপ সরিয়ে ইট বিছিয়ে বালু ছিটিয়ে সমতল করে দেয়া হয়েছে। সেখানে  পর পর কাঠের চৌকি বসানো হয়েছে। তাতে বিভিন্ন ধরনের পোশাক উঠিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তীব্র রোদের কারণে ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ শামিয়ানা টানিয়েছেন। কেউ কেউ মাটিতে বড় ছাতা পুঁতেছেন আবার কেউ হাতেই ছোট ছাতা ধরে আছেন। তবে সেখানে রাতের জন্য কোনো বিদ্যুতিক ব্যবস্থা দেখা যায়নি। 

 

তীব্র রোদে হাতে ছাতা ধরে চৌকিতে কিছু শার্ট বিছিয়ে বসে আছেন মনির হোসেন। তাদের নিউ খান শাড়ি ও নিউ খান ফ্যাশন নামের দুইটা দোকান ছিল। সেখানে ৮০ লাখ টাকার মতো মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মনির বলেন, খান ফ্যাশনের এক লাখ টাকার মতো মাল ছিল পাশের মার্কেটে। সেগুলো নিয়ে বসছি। এখানে রোদের তাপ লাগছে। জানি না উপরে কিছু দিবে কি না। তিনি বলেন, ঈদের আগে এই ব্যবস্থায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। ব্যবসায় লস খেয়েছি। এখন ঈদের আগে যতটুকু হয় আরকি। মার্কেট তো পুড়ে গেছে। এখন ক্রেতারা কেউ আসবে কেউ আসবে না। দেখি কি হয়। 

 

প্রায় ৯০ লাখ টাকায় দু’টা দোকান কেনা ছিল। আর দু’টি ভাড়া। এই চার দোকানে মালামাল ছিল ৭০ লাখ টাকার। আগুনে পুড়ে সব ছাই। এখন একটা চৌকির উপর কিছু জামাকাপড় নিয়ে বসে আছেন বাহার। তার দোকানের নাম ছিল বাহার গার্মেন্ট। তিনি বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। কারও কাছে হাত পাততে পারি না। তাই ধারে কিছু পুঁজি করে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। আমাদের যে ভিটি ছিল সেটি দেয়ার জন্য একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই আমরা ওই আশাতেই এখানে বসেছি। অন্যথায় এত রোদে এখানে এসে আমরা বসতাম না। সিয়াম গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকার সবুজ বলেন, ঈদের আগে খুব একটা লাভ হবে না। এত গরমে কীভাবে দোকান করবো। ত্রিপালের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। ছাতার নিচেও এখানে বসে থাকা সম্ভব না। তাও রোজার মাসে। ভিটি রাখার জন্যই আসা। এখন আমরা যতদিন পারি দোকান করবো। জান্নাত অ্যান্ড জিম ফ্যাশনের মোজাম্মেল হক বলেন, এখানে কি হয় না হয় সেটা দেখার জন্য বসেছি। ঈদের পর কীভাবে কি পুনর্বাসন করা যায় সেটা দেখবে মালিক সমিতি। এখন ২৬-২৭ রোজা পর্যন্ত হয়তো বসবে ব্যবসায়ীরা।