নওগাঁয়ে র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর দায় সম্পূর্ণ সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রাজধানীর মিরপুর ২ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে পল্লবী ও রুপনগর থানা বিএনপির আয়োজিত এক ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, ‘‘ আজকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। আমরা শুধু বিএনপির লোকেরা নই, সাধারণ মানুষও বাদ যাচ্ছে না। নওগাঁর একজন মহিলা তিনি সরকারি কর্মচারিৃ কি কারণে তাকে র্যাব তুলে নিয়ে গেলো এখন পর্যন্ত জানা যায় নাই এবং তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩৬ ঘন্টার মধ্যে সে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করলো, তাকে মেরে ফেলা হলো।”
‘‘ এখন তারা বলছে যে, এটা ভুল হয়েছে। এক মন্ত্রী বলছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এটার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। এই অপপ্রয়োগের ফলে একজন নিরাপরাধ অসহায় নারীর জীবন পর্যন্ত চলে গেলো। এর দায় কে নেবো? এই দায় সম্পূর্ণ সরকারকে নিতে হবে।”
‘ডিজিটাল আইনে সাংবাদিক নির্যাতন প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ অ্যাক্টের আওতায় আপনারা দেখেছেন প্রথম আলোর একজন সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে হঠাত করে গভীর রাত্রে তুলে নিয়ে গেলো। তারপরে ৩৬ ঘন্টা তার কোনো খবর নাই্। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে নতুন করে মামলা দায়ের করে।”
‘‘ শুধু তাই নয়, আজকে প্রথম আলো‘র সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এবং এটাই শেষ নয়। এই সরকার আসার পর থেকে আমাদের আরো তিনজন অত্যন্ত খ্যাতনামা এদেশের শ্রদ্বেয় সম্পাদক তাদেরকে এমন অবস্থা তৈরি করেছে যে, এদেশে থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন, আমার দেশের মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের আসাদ এবং যায় যায় দিনের শফিক রেহমানৃ তারা দেশে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছেন, জেল-জুলুম সব কিছু হয়েছে। অসংখ্যক সাংবাদিক ভাইদের ওপর নির্যাতন চলছে, হত্যা হয়েছে, মেরেও ফেলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আজকে ভোট দেয়ার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কোনো কিছুই অবশিষ্ট নাই। প্রতিমুহুর্তে আমাদেরকে সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে এগুতে হচ্ছে। সেখানে আমরা শৃঙ্খলা না মানি, সেখানে যদি আমরা বিশৃঙ্খল হয়ে যাই তাহলে সেই যুদ্ধে আমরা কী জয়লাভ করতে পারব? আমরা কি পরিবর্তন আনতে পারবো? আমরা কি চাই শেখ হাসিনা সরকার চলে যাক।”
‘‘ তাহলে রমজানের দিনে এই পবিত্র দিনে আমাদের সকলকে শপথ নিতে হবে যে, আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবে যে নির্দেশ দেবেন সেই নিদের্্শে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই েিম্ল সংগ্রাম করতে হবে।”
পল্লবী থানা আয়োজিত এই ইফতার অনুষ্ঠানে স্কাইপেতে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্য্না তারেক রহমানও বক্তব্য রাখেন।
ইফতার অনুষ্ঠানে ব্যাপক নেতা-কর্মীর সমাগমে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিলো। সাংবাদিকরা একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টার মধ্যে কয়েকজন কর্মীরা বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে পরক্ষনে মারমুখী হয়ে উঠে। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়। পরে মঞ্চ থেকে নেতারা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
‘ক্ষুব্ধ ফখরুল’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যের শুরুতে এরকম ঘটনার জন্য দূঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তির একটা অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত যে ঘটনা ঘটেছে সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দূঃখ প্রকাশ করছি। আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই এই রুপনগর, পল্লবী থানার নেতা-কর্মীদেরকে আপনারা কি সত্যিকারই দলকে ভালোবাসেন? মনে হয় না।”
‘‘ তাহলে আজকে এই ঘটনা ঘটতো না। আপনারা অতিথিদেরকে সন্মান করতে জানেন না। আমি অত্যন্ত দূঃখিত শোকাহত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বক্তৃতা করছেন সেই সময়ে আপনারা এই সমস্ত ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি অনুরোধ করবো দয়া করে শৃঙ্খলার সঙ্গে এখানে থাকেন। আমি ছাত্রদল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপির নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করব- আপনারা দয়া করে শৃঙ্খলাবদ্ধ হন। শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় না, কোনো বিজয় লাভ করা যায় না।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমি নিজে দেখেছি, কারা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা কারা? এখানে আওয়ামী লীগের দালালেরা ঢুকেছে, এখানে সরকারের দালালের এসেছে।”
‘‘ আমি আবারো আমার সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।”
এরপরও কিছু উতশৃঙ্খকর্মী হৈ-চৈ শুরু করলে আবারো ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন ‘এরা কারা? চুপ, থামো।’ নেতাদের প্রতিও তিনি ক্ষোভ ঝাড়েন কেনো সাংবাদিকদের জায়গা নির্দিষ্ট করা হলো না।
‘আবারো বাকশাল করার পায়তারা’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আবার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করবার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আবারো সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা নিষিদ্ধ করে নাই কিন্তু রাজনৈতিক দলের কার্য্ক্রম তারা বন্ধ করে দিচ্ছে।”
‘‘ বিএনপিকে তারা বাইরে কোথায় কর্মসূচি করতে দিতে চায় না। আজকে যদি খোলা জায়গায় প্যান্ডেলে করতে পারতেন তাহলে এতো সমস্যা(প্রচন্ড ভিড়) হতো না। কিন্তু বাইরে কর্মসূচি করতে দেয় না। তারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চায়, তারা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়।”
তিনি বলেন, ‘‘ সেভাবে আবারো তারা নতুন নির্বাচনের পায়তারা করছে যে ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন করবে। সেই নির্বাচন আবার আগের মতো করবেন, ২০১৪ তে যেমন করেছেন, ২০১৮ তে যেমন করেছে যে বিরোধী দল থাকবে না। শুধু আপনারাই থাকবেন আর আপনার পুলিশ-পাইক পয়দারা থাকবে যে, যেমন খুশি তেমন সিল মেরে ভোটের আগের রাত্রেই ফলাফল নিয়ে যাবেন।”
‘‘ সেটা এবার এদেশের মানুষ হতে দেবে না। নিজেদের যদি রক্ষা করতে চাই, নিজেদেরকে যদি বাঁচাতে চাই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে যদি স্বাধীনতার স্বাদ দিতে চাই, মুক্তির স্বাদ দিতে, আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত করতে চাই, যদি আমাদের নেতা তারেক রহমানকে েেদ্শ ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে আমাদের একমাত্র পথ হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে সমস্ত মানুষকে একত্রিত করে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন করতে হবে, আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই।”
জহিরুল হকের সভাপতিত্বে ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ইয়াছিন আলিসহ থানা নেতারা বক্তব্য রাখেন।