ঢাকা, শুক্রবার ১৯ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

সরকারের ‘সাজানো ফাঁদে’ জনগন পা দেবে না

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-03-19, 12.00 AM
সরকারের ‘সাজানো ফাঁদে’ জনগন পা দেবে না

তত্তাবধায়ক সরকার ছাড়া সরকারের ‘সাজানো নির্বাচনী ফাঁদে’ জনগন পা দেবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।তিনি বলেন, ‘‘ এরা(আওয়ামী লীগ সরকার) পরিকল্পিতভাবে এমন ভাবে সাজিয়েছে সেই সাজানোতে দেখা যাবে যে, নির্বাচন নির্বাচন খেলা একটা, তামাশা একটা হবে, সেই তামাশায় দেখা যাবে যে, তারাই নির্বাচিত হয়ে আসবে।”‘‘ ওই ফাঁদে আর পা দিচ্ছে না মানুষ, বাংলার মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ আর সেই ফাঁদে পা দেবে না। যে বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এবার সেটা হবে না।”

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ ওরা(সরকার) আর কি সুন্দর সুন্দর কথা বলেৃ তারাই নাকি গণতন্ত্র এনেছে, তারাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের গণতন্ত্র হচ্ছে এই যে, যা দেখছি আমরা।”

 

‘‘ আমাদের সময় হাতে খুব কম। আবার তারা পায়তারা করছে নির্বাচন করবে একটা এবং নির্বাচন করবে কি? দুনিয়াকে দেখাবে যে, দেখেও আমরা তো নির্বাচন দিয়েছি। এবার এটা হবে না।”

 

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে কেয়ার টেকার গভমেন্ট চেয়েছি সেই কেয়ারটেকার গভমেন্ট দিতে হবে। এরা কত প্রতারক, ভন্ড। এই কেয়ারটেকার গভমেন্ট নিয়ে কম দুষ্টামী করেছে, কম ভন্ডামী করেছে। যখন আপনারা খায়রুল হক সাহেব(ততকালীন প্রধান বিচারপতি) বললেন, এটা নাকী চলবে না, সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।ওই ভদ্র লোককে একদিন না একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশের ক্ষতি করার জন্যৃ.।”

 

‘‘ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টের কমিটি করে সেই সময় সংসদের দলগুলোর মতামত চাইল। সবাই মতামত দিলেন ইনক্লুডিং আওয়ামী লীগ যে, কেয়ারটেকার গভেমেন্ট থাকা  উচিত.. আরো দুইটা নির্বাচন হতে পারে। আর সেটা যখন প্রধান মন্ত্রীর অফিসে গেছে ওইটা উনি(প্রধানমন্ত্রী) উল্টে দিলেন। উনি বলে দিলেন- না এটা হবে না, এটা এখন দলীয় সরকারের অধীনে হবে। কর্তৃত্ববাদ জমিদারি কাকে বলে?”

 

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা-অবিশ্বাসের কারণেই ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া তত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানের সংযোজন করেছিলেন বলে তার প্রেক্ষাপট তু্লনে মির্জা ফখরুল।

 

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।

 

জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পর দলটি(জাগপা) দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়। একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, আরেকটি নেতৃত্বে আছেন খন্দকার লুতফর রহমান। সরকার বিরোধী যুগপত আন্দোলনে তাসমিয়ার নেতৃত্বে একাংশ ১২ দলীয় জোটে এবং খন্দকার লুতফরের অংশ জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটে রয়েছে।

 

‘ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে প্রসঙ্গে’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ স্বাধীনতার পর ভিন্নমত পোষণকারীদের কিভাবে ধবংস করা যায়, তাদেরকে কিভাবে নির্মূল করা যায়, গুলি করে,হত্যা করে, কুপিয়ে, জেলে দিয়ে সব কাজ করেছে ওরা। বইয়ের মধ্যে পাওযায় যে, ত্রিশ হাজার তরুন যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এসব কথা বললেই নাকী আমার অন্তরে তারা(ওবায়দুল কাদের) হোলাহল দেখতে পান। আজকের পত্রিকায় এসেছে। হলাহল অর্থাত বিষ।”

 

‘‘ আমি এসব কথা বলি, তাদের গায়ে আগুন লেগে যায়। আমি মনে করিয়ে দেই তাদের অতীতটাকে এবং আবার বর্তমানটাকে।এই আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালে যখন সব দিক দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে কোনো দিকে সামাল দিতে পারছে না তখন এই সংবিধানটাকে তারাই কাটা ছেঁড়া করেছেৃ প্রথম দিকে করেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইন-তাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা দিতে হবে, তারপর জরুরী অবস্থা আইন.. শেষ পর্যন্ত তাতেও হয় তখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। এটাই ইতিহাস।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ কোনো গণতন্ত্র সহ্য করতে পারে না, আওয়ামী লীগ কখনো ভিন্নমতে বিশ্বাস করে না। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।”

 

‘‘ একদলীয় শাসনব্যবস্থা করে সব পত্র-পত্রিকা বন্ধ করেছিলো। আজকে আমার দূঃখ হয়, কষ্ট হয় এতো চ্যানেল তার কয়টা চ্যানেলে গণতন্ত্রের কথা বলে, কয়টা চ্যানেলে ভিন্নমতের কথা হয়? কয়টা পত্রিকায় ভিন্নমতের কথা বলা হয়?”

 

‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখছি ভাই। ভয়-ভীতি এমনভাবে আওয়ামী লীগ ছড়িয়ে দিয়েছে এমনকি যারা কথা বলতো তারাও এখন কথা বলে না। তারা টক শোতে আর যায় অনেকে, তারা অনেকে পত্রিকায় লেখে না। কী জানি কোন শব্দটা লেখলে তাদের আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হবে। ”

 

‘‘ খুব কষ্ট হচ্ছে এজন্য যে, আমাদের দেশের মানুষ এতো ভীত সন্তস্ত্র হয়ে গেলো? এতো ভীতু হয়ে গেলো, কাওয়ার্ড হয়ে গেলো? কেনো ওই সমস্ত মানুষেরা যারা সত্য কথা বলেন তারা সোচ্চার হচ্ছেন না, কেনো তারা বলছেন না তুমি যা সেটা অন্যায় করছো, জনগনের অধিকারকে তুমি কেড়ে নিয়েছো, তুমি একাত্তর সালে আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম তার মূল বিষয়টা তুমি ধবংস করে দিয়েছো। তুমি একটা এনায়কতান্ত্রিক, স্বৈরাচারি, একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন জনগনের ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছো।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ একজন মানুষকে হত্যা করলে কেনো আপনারা কথা বলেন না, কেনো বলেন না যে, সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনে পুলিশ ঢুকিয়ে দিয়ে আইনজীবীদের মেরে তাড়িয়ে দিলো। একজনও আমি দেখলাম না তারা বলেছেন এটা অন্যায় হয়েছে। আমি দেখলাম না সেই তথাকথিত সুশীল সমাজ যারা প্রতিবাদ করেছেন।”

 

‘‘ এরকম ভয় যদি থাকে তাহলে এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।”

 

‘জনসভা-শান্তি সমাবেশ: সরকার শয়তানি’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেখবেন আমাদেরকে আগের জনসভা করতে বাধা দেয় না। ওইটা আরেকটা শয়তানি। জনসভা করতে বাধা দেয় না। কিন্তু যখনই বলব আমরা এখন বের হবো, মিছিল করবো, প্রতিবাদ করবো, বিক্ষোভ করবো তখনই আটকিয়ে দেবে।”

 

‘‘ ওরা এটা(জনসভা) দেখিয়ে পাশে একটা শান্তি সমাবেশ দেয়। এর নাম কি দিয়েছে- শান্তি সমাবেশ। এই শান্তি সমাবেশ দিলেই আমাদের তখন শান্তি কমিটির কথা মনে পড়ে। ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি পাকিস্তানিরা তৈরি করেছিলো যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করবো, গ্রেফতার করতো। সেইভাবে তারা প্রতারণা করছে, মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। সমস্ত মানুষকে তারা মনে করছে যে, এরা সকলে বোকা, এরা কিছুই বুঝে না, যা বুঝাবো তাই বুঝবে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ এই অবস্থা থেকে আমরা উঠে আসতে শুরু করেছি। নাউ উই আর গিভেন রাইটস। ১৭ জন আমরা প্রাণ দিয়েছি। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়ে আছেৃ.। ওইদিন ( ৮ ডিসেম্বর) কিন্তু আমি আর মির্জা আব্বাস(স্থায়ী কমিটির সদস্য) শুধু গ্রেফতার হয়নি। এর আগেরদিন নয়া পল্টনের অফিস থেকে ৪৩৬ জন গ্রেফতার হয়েছেৃ তারপরে অসংখ্য গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের পর নেতা-কর্মীদের সাথে কি আচরণ করেছে কারাগারে। এরকম অসভ্য বর্বরোচিত আচরণ আমরা আগে কখনো দেখিনি।”

 

‘‘ এখান থেকে আমরা উঠে আসতে শুরু করেছি। এটাকে আরো জোরদার করতে হবে, বেগবান করতে হবে। এবার রুখে দাঁড়াতে হবে। আর চুপ করে থাকা যাবে না। আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠে আমার অধিকার আমাকে আদায় করে নিতে হবে, এদেশের মানুষের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।”

 

‘‘আমরা যে কেয়ার টেকার গভমেন্ট চেয়েছি সেই কেয়ারটেকার গভমেন্ট দিতে হবে। আমরা কথাটা স্পষ্টৃ আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারটা কেনো চাচ্ছি। বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো জন্য। নো। আমরা জনগনের অধিকারটা ফিরিয়ে আনার জন্য।আমরা চাই, প্রত্যেকটা মানুষ তার অধিকার প্রয়োগ করুক, তার ভোট যাকে খুশি তাকে দেবে এবং সেখান থেকে একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে।

 

জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুতফর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপের এমএম শাওন সাদেকী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।