খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়নের গোমতির পাহাড়ী দুর্গম এলাকা বামায় মাটি খুঁড়ে কালো খনিজ কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।কয়লার খনিটির অবস্থান মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এবং আমতলী ইউনিয়ন থেকে ৫ কিলোমিটারেরও বেশি পাহাড়ি সরু পথ পাড়ি দিয়ে ৮নং ওয়ার্ডের দুর্গম এলাকা বামায়।মোটরসাইকেলে এবং ঘণ্টাখানেক পায়ে হেঁটে পাহাড়ি উঁচুনিচু পথ পেরিয়ে দুর্গম এ বামায় পৌঁছানো যায়।শুক্রবার (১০ মার্চ ২০২৩ ইং) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে কয়লা বের করে নিয়ে আসছে।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, সেখানে বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন কয়লা পাওয়া যাচ্ছে। এ কয়লা এনে তারা শুকিয়ে বাসা বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন।
আরো জানা গেছে, এক বছর আগে দুর্গম পাহাড়ে কৃষি কাজ করার উদ্দেশ্যে মাটি খনন করতে গিয়ে এ কয়লার সন্ধান পান তারা। ইতোমধ্যে এসব কয়লা সংগ্রহ করে তারা রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারও করছেন। কালো সোনা খ্যাত কয়লার খনি দেখতে স্থানীয়রা প্রতিদিন সেখানে ছুটে গেলেও এখনো তা প্রশাসনের নজরে আসেনি।
স্থানীয় কৃষক মো. হানিফ বলেন, প্রায় বছর খানেক আগে আদা-হলুদ রোপণের জন্য মাটি খনন করতে গিয়ে কয়লা দেখতে পাই। পরে কৌতূহলী হয়ে এসব কয়লা সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। অন্যদের জানালে অনেকেই আগ্রহী হয়ে সেসব কয়লা সংগ্রহ করে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছে।
আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, গোমতির বামা এলাকায় কয়লা পাওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি, সরকার যদি যাচাই বাছাই করে কয়লা উত্তোলন করে তাহলে বর্তমান দেশের যে জ্বালানি সংকট রয়েছে তার ঘাটতি কিছুটা পুরন হবে। দুর্গম পাহাড়ে কয়লা পাওয়ার বিষয়টি সঠিক হলে তা পাহাড়ের জন্য বড় পাওয়া হবে বলেও মনে করেন তিনি। গোমতির বামায় একাধিক স্থানে মাটির নীচে কয়লা থাকার কথা জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নিলয় ত্রিপুরা কয়লা উত্তোলনে সরকারী উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানান।
গোমতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো:মনির হোসেন জানান বৃহত্তর গোমতির বামার এলাকার কয়লার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে স্থানীয়দের কাছে আমি শুনেছি। বিষয়টি যদি সত্যি হয় সরকারের জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কয়লা উত্তোলন করার মাধ্যমে দেশের জ্বালানি সংকট নিরসন হবে আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গণি বলেন, দূর্গম পাহাড়ী বামা এলাকায় মাটি খুড়ে পাওয়া কয়লার বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হলে দেশে বিদ্যমান কয়লা ঘাটতি পুরণ হবে। বিদ্যুতের যে জ্বালানি সঙ্কট রয়েছে তাও দুরীভুত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
কয়লা রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, বস্তুত বামাতে কয়লার খনি আবিষ্কৃত হলে তাদের ভাগ্য বদলে যাবে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের গোমতী বামা এলাকায় কয়লা পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয়রা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। আমি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য। রিপোর্ট পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতীর বামা কয়লা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে উত্তোলনে দেশের জ্বালানি সংকট দূর হবে বলে জানান তিনি।