বরিশাল নগরীর প্রায় সব এলাকায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে মশার উপদ্রব। দিনের বেলাতেও বাড়িঘরে মশার উৎপাত চলে। সন্ধ্যা থেকে মশার আক্রমণে ঘরে বাইরে টেকা দায়। খোলা জায়গায় আরও বেশি। মশা মারতে সিটি করপোরেশেন তৎপরতা খুব বেশি দেখা যায় না। কোন কোন এলাকায় ওষুধ ছিটানো হলেও তাতে খুব একটা কাজ হয় না বলে অভিযোগ অনেকের। কিটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কিউলেক্স মশা বেড়ে যাওয়ায় চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
মাঘের শীতের তীব্রতা শেষে, ফাল্গুনের আগমনী বার্তায় বাড়ছে তাপমাত্রা। এরসাথে বরিশালবাসীকে ভাবাচ্ছে মশার উপদ্রব। সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকায় মশার উৎপাত বেড়েছে। দিন কিংবা রাত মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরবাসী।
বিগত বর্ষা মৌসুমের শেষভাগ থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি যথেষ্ঠ দুঃশ্চিন্তা বৃদ্ধি করে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জনের। যার সিংহভাগই ছিল বরিশাল নগরীতে। এ মনকি মৃতদের সবই ছিল বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে এ সব মৃতদের সবই বরিশাল নগরীর না হলেও নগরীতে ডেঙ্গু বেশ জাকিয়ে বসেছিল।
তবে প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল নগরীতে মশা সাধারন মানুষকে যথেষ্ঠ কষ্ট দিতে শুরু করেছে তা নিয়ে সবাই একমত হলেও নগর ভবনের দাবী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি নেই।
সচেতন মহলের মতে, নগর ভবনের এ দাবীর সাথে বস্তবতার ঘাটতিও ব্যাপক। এ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মশক নিধনে নগর ভবনের হাতে রয়েছে মাত্র ১২টি ফগার মেশিনের সাথে কিছু হ্যান্ড স্প্রেয়ার। বাস্তবে যার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রন যে সম্ভব নয়, তা নগর ভবনের দায়িত্বশীল মহল বুঝলেও স্বীকার করেন না।
নগরীর প্রায় দেড়শ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা ড্রেন ও ৩শ কিলোমিটারের মত রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে শুরু করে মশক নিধনে নগর ভবনে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক প্রায় ৯শ পরিচ্ছন্ন কর্মী ও শ্রমিক থাকলেও তাদের অনেকের বাস্তব কর্মকাণ্ড নিয়েও যথেষ্ঠ প্রশ্ন রয়েছে নগরবাসীর মনে। বিশেষকরে যেসব পরিচ্ছন্ন কর্মী নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সংযুক্ত, তাদের অনেকেই দায়িত্ব পালনে আন্তরিক নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে ঘন্টায় ৫ মিলিমিটরের বেশী বৃষ্টি হলেই বেশীরভাগ রাস্তাসহ নগরীর বিশাল এলাকাই পানির তলায় চলে যাচ্ছে। নগরীর ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার না হবার পাশাপাশি কতিপয় নগরবাসী পলিথিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপচনশীল দ্রব্য ড্রেনে ফেলায় সামান্য বৃষ্টিতেই পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা রুদ্ধ হচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা নগরীর নিত্যসংগী হয়ে উঠেছে। আর অপরিচ্ছন্ন ড্রেনের পাশাপাশি আবর্জনাসমুহ নগরীর মশার বংশ বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে।
তবে সচেতন মহলের মতে, নগর ভবনের কনজার্ভেন্সি বিভাগের প্রায় ৯শ পরিচ্ছিন্নতা কর্মীর আন্তরিকতার পাশাপাশি তাদের কাজের সুষ্ঠু তদারকি নিশ্চিত করতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য। পাশাপাশি নগর ভবন মাত্র ১২টি ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের যে ব্যার্থ চেষ্টা করছে, তার উন্নয়নেরও কোন বিকল্প নেই।
মহলটির মতে, নগরির ৩০টি ওয়ার্ডে ৬০টি ফগার মেশিন প্রয়োজন হলেও নুন্যতম ৫০টির কোন বিকল্প নেই। নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে তৃনমূল পর্যায়ে নিয়মিত নিবিড় নজরদারীর কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন মহলটি।
কারণ নগরীর ডাষ্টবিন থেকে শুরু করে ড্রেন পরিস্কার এবং রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার ওপরই মশকমূক্ত ও জলাবদ্ধ শূণ্য নগরী দৃশ্যমান হতে পাড়ে বলেও মনে করছেন নগরবাসী।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কনজার্ভেন্সী বিভাগের প্রধান ডা. রবিউল আলম নগরীর প্রধান এলাকায় মশার উপদ্রব যথেষ্ঠ সহনশীল বলে দাবী করে নতুন ও বর্ধিত এলাকায় ডোবা, নালা বেশী হওয়ায় সেসব এলাকার পরিস্থিতি উন্নয়নেও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি নগরী পরিচ্ছন্ন রাখা সহ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে নিরন্তর প্রচেষ্টার কথাও জানান তিনি।
তবে নগরীতে অতি সাম্প্রতি মশার দুরন্তপনা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, এবার শীত আগেভাগে বিদায় নিয়ে মধ্য মাঘ থেকে বসন্তের আবহাওয়ার পরে আবার কয়েকদিন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রীর নিচে নেমে যায়। আবার ফাল্গুনেই তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর ওপরে উঠে গিয়ে গরম পড়তে শুরু করায় মশার বার বারন্ত অবস্থা চলছে বলে জানিয়ে তা নিয়ন্ত্রনে নগর ভবনের নিরন্তর প্রচেষ্টার কথাও জানান ডা. রবিউল।
খুব শিঘ্রই বরিশাল নগরীতে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রনে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আগামী বর্ষার আগেই নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা আরো উন্নয়নের কথাও জানান তিনি।