মাদারীপুরের শিবচরে ৭৩ নং বাখরেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি আব্দুল হান্নান ফরাজীর থাপ্পরে কানের শ্রবনশক্তি হারিয়েছেন ফাহিম শিকদার (১০) নামে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ফাহিম ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র। তার রোল নং ১৯ এবং সে শিকদার কান্দি গ্রামের মাহবুব আলমের ছেলে। এই ঘটনায় তিন সদস্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ছাত্রের বাবা।
আহত শিক্ষার্থী ফাহিম জানান, ‘গত ২৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে স্কুলের দপ্তরি হান্নান কাকা বিদ্যালয়ের সিড়ির নিচে ঝাড়ু দিচ্ছিল।এসময় ময়লা একটি ঝুড়িতে রাখছিলো।আমাদের স্কুল ছাত্র-ছাত্রিরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় কোন এক ছাত্রের পায়ে লেগে ওই ময়লা পড়ে যায়।পরে আমি ওখান দিয়ে নামার সময় হান্নান কাকা আমার কানে জোড়ে থাপ্পড় দিলে আমি ঘুড়ে মাটিতে পড়ে যাই।পরে স্যারেরা আমাকে উঠিয়ে পানি ঢেলে অফিস রুমে নিয়ে যায়।আর এঘটনা যেন আমার পরিবারকে না জানই তার জন্য আমাকে তারা অনুরোধ করেন।আমাদের প্রধান শিক্ষক ও শ্রেনি শিক্ষক আমাকে বলে,পরিবারের লোকজনের জানলে তাদের উপর অনেক চাপ আসবে।’
এ বিষয়ে ফাহিমের বাবা মাহবুব আলম বলেন, ঘটনাটি ঘটার কিছুদিন পরে (সোমবার) ফাহিম তার কানে ব্যাথা জানালে আমি তার কাছে ঘটনার সততা জানতে চাইলে ফাইম আমাকে সব খুলে বলে। ওই দিন বিকেলের দিকে তার কানে বেশি ব্যথা শুরু হলে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে প্রাথামিক চিকিৎসা নেই।দুই দিন পরে আমি তার বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাই। কিন্তু তার কানের ব্যথা বাড়তে শুরু করে সাথে ফাহিম বমি করা শুরু করেন।এর পরে দেখি বমির মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। এসময় আমি শিবচরে এক ডাক্তারকে জানালে তার পরামর্শ অনুযায়ী ফাহিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাই। পরে ঢাকার চিকিৎসক ফাহিমের কানের ৯৩ % শ্রবন শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘একজন দপ্তরি এভাবে আমার ছেলেকে কানে থাপ্পর মেরে ক্ষতি করবে এটা কখনো আমি চিন্তাও করিনি।তারা যদি আগে ঘটনাটা আমাকে জানাতো সাথে সাথে আমি চিকিৎসা করালে হয়তো ছেলেটির কানে এ সমস্যা হতো না।পরে (২ ফেব্রুয়ারী) বাড়ি এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলেন। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামচুল আলম বলেন, ‘ ঘটনাটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা।আমি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে মিটিং করি।এবং বিষয়টি সুরাহ না হওয়া পর্যন্ত তাকে (দপ্তরিকে) বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ ও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রকে কানে থাপ্পর মারার অভিযোগের বিষয়ে আমাদের ইউএনও মহোদয় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সংশ্লিষ্ঠ ক্লাস্টারকে প্রধান করে ৩ সদস্যর একটি কমিটি করেছি।আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।