টাকা আদায়ে সুদের কারবারির চাপ এবং প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা ও মারধরের লজ্জায় বিষপানে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন পরিবারের একমাত্র অবলম্বন থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা) চালক জসিম মৃধা ঘরামি (৩২)। এমনটাই অভিযোগ পরিবারের।স্বজন ও চিকিৎসকদের চেষ্টায় দীর্ঘ দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।মৃত জসিম ঘরামি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইছাহাক ঘরামির ছেলে।
মৃত জসিমের বোন জামাই স্বপন হাওলাদার জানান, পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা সাবের হাওলাদারের স্ত্রী ও সুদ কারবারি সাজেদা বেগমের কাছ থেকে আনুমানিক ৩ মাস আগে জসিম ৪০ হাজার টাকা নেন। নিয়মানুযায়ী সুদের টাকার কিস্তিও পরিশোধ করছিলেন জসিম। তবে সুদ কারবারি সাজেদা বেগম জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে জসিমের কাছে ৬০ হাজার টাকার সুদ দাবি করে চাপ দেন এবং রাস্তাঘাটে লোকজন দিয়ে জসিমকে অপমান অপদস্ত, মারধর করেন। যা সইতে না পেরে গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে লজ্জায় কীটনাশক পান করেন জসিম।
জসিমের বন্ধু ও থ্রি হুইলার চালক সাগর বলেন, সুদের টাকার জন্য গত ২৫ জানুয়ারি বিকেলের দিকে গৌরনদীর বার্থী বাসস্ট্যান্ডে বসে জসিমকে সাজেদা বেগমের ভাই সুরত খানের ছেলে শাহআলম আটকায়। ওইসময় প্রকাশ্যে সবার সামনে জসিমের শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে একটি দোকানের সামনে নিয়ে যান শাহআলম। পরবর্তীতে কথোপকথনের এক সময় চুক্তির বাইরে টাকা দিতে রাজি না হলে, সবার সামনেই তাকে চর থাপ্পর দেওয়া হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এরপর আমি ৩ মাসের মধ্যে টাকা দেওয়ার জামিন হলে শাহআলম বন্ধু জসিমকে ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে বাড়ি গিয়েই জসিম কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, জসিমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে স্বজনরা। দুদিনের মাথা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে ২৭ জানুয়ারি আবারও অসুস্থ হয়ে পরেন জসিম। পরে তাকে সেইদিন বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জসিমের আরেক বন্ধু রাজিব জানান, ৪ মাস আগে জসিমের বাবা ইছাহাক ঘরামির মৃত্যু হয়। এরপর থেকে মা সেতারা বেগম, স্ত্রী রোজিনা, ৫ মাসের এক শিশুসন্তানসহ মোট ১ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে ৬ জনের সংসারের হাল ধরে জসিম। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ার মধ্যে সুদি কারবারি সাজেদা বেগম ও তার স্বজনদের চাপের কারণে কিছুদিন ধরেই বিষন্নতায় ভূগছিলো জসিম। সর্বশেষ প্রকাশ্যে মারধর, লাঞ্ছনা সইতে না পেরেই জসিমের এভাবে মৃত্যু হলো। এখন তার সংসারের হাল কে ধরবে এবং সুদি কারবারির টাকা কে দিবে এমন প্রশ্ন বন্ধু ও স্বজনদের।
এদিকে ছেলের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন মা সেতারা বেগম।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মৃতের মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে জসিমের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালাম।